কল্যাণমুখী কর্মই যাঁদের সৌন্দর্য
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। এরই দেয়াল ঘেঁষে একটা ব্যানার। সেখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্তরিক কাজটি করে যাচ্ছেন। দেশ মাটি আর মানুষের জন্য তাঁরা বসে থাকতে পারেননি। তাঁরা জানেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কল্যাণমুখী কাজেও আত্মনিয়োগের ব্যাপারটি রয়ে গেছে। এ পর্যায়ে তাঁরা বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। আমি ওখানে থেমে পড়ি। কথা বলি নাইম আবেদীনের সঙ্গে। জানালেন, ত্রাণের সাতটি ট্রাক পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে সাতটি দল।
তাঁদের কৃতিত্ব মানুষের কল্যাণে। কুমিল্লার দূরবর্তী এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। চিড়া, মুড়ি বা গুড়ের মতো শুকনা খাবার, সুপেয় পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন আছে ত্রাণের তালিকায়। তাঁরা সংগঠিত হয়ে মহান এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
দ্বিতীয় টেবিলে যাই। এরা ব্যস্ত ভীষণ! এই অংশের সবাই বিবিএর শিক্ষার্থী। রাওনাক চৌধুরী প্রমা তাঁদের মুখপাত্র। বললেন, জরুরি ওষুধ পাঠাচ্ছি আমরা। অন্য ত্রাণসহ এসব পাঠানো হচ্ছে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
রাফাত নাইম বললেন, ইউনিভার্সিটিতে আছে ২০টি ক্লাব। ফ্যাকাল্টি প্রতিনিধি কিংবা শিক্ষক শিক্ষার্থী বা তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা দিয়ে যাচ্ছেন এসব পণ্য। সংগ্রহ করা হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায়। আবার দূরে পাঠানোর জন্য সেসব আলাদা–আলাদা রাখা হচ্ছে। তনিমা তাসনিম তন্দ্রা অঙুলি নির্দেশনায় দেখালেন সেই শ্রেণিবিন্যাস।
কথা হয় অনেকটা বিস্তৃত। প্রমা বললেন, সবাই একসঙ্গে কাজে নেমেছি বলেই এমন উদ্যোগটি সফল হতে যাচ্ছে। দেশকে-দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে মূল বিষয়। মানুষ বিপদে পড়লে কি আর বসে থাকা যায়! লামিয়া জাহান কার্টন সাজাচ্ছিলেন। কাজটি সামলাতে সামলাতে বললেন, দেশের মানুষ দেশের সম্পদ। তাঁরা জাতির শক্তি। রোকাইয়া জামান তাঁর জায়গা থেকে যোগ করলেন, তবে আমাদের আছে দায়িত্ব।
এসব কাজে তাঁরা নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার বাধার প্রাচীর ভাঙছেনও। প্রমা জানালেন, পরিবহনে সাত হাজার টাকার জায়গায় দিতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। মুশফিকুর সালেহীন পাশে ছিলেন। তিনি বললেন, ১৫০ টাকার লাইফ জ্যাকেট কিনতে হচ্ছে ৭০০ টাকায়।
আমি শিক্ষার্থীদের গৌরবের সমাচার শুনতে চাই। সুযোগটি মিলে গেল। এরই মধ্যে এসে পড়লেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শাহজাদী ফানান্না কথা। এখানে আসার শুরুর পর্বে তাঁকে দেখলাম পাশের টেবিলে সাংগঠনিক আলাপে। বুঝলাম, কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনার জন্য চেষ্টার ঘাটতি নেই। অভিনন্দন জানালাম। আমরা তখনো কথায়। তিনি তথ্য দিতে আন্তরিকতা দেখালেন।
ক্লাবের একজন সুখবর দিলেন। ইউনিভার্সিটির আগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন ক্লাব, ইকোনমিকস ক্লাব, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ক্লাব মিলে দুর্গতদের জন্য সাত হাজার লিটার পানির ব্যবস্থা করেছে। বাহ! আমি আমার প্রতিক্রিয়া জানাই।
ত্রাণকর্মে তাঁদের অনুভূতি জানতে চাই। হাবিবা ইমা বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো অবশ্যই মানবিক কর্মের মধ্যে পড়ে। এমন একটি সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। তানজিনা জেরিন বলেন, নিজের কাজের বাইরে এসে যে যতটুকু পারে সেটার গুরুত্বও কম নয়। শাহজাদী ফানান্না কথা বললেন, স্বেচ্ছাসেবার মধ্য দিয়ে কল্যাণমুখী কর্মের উদ্দীপনা আসে, এ আমাদের অর্জন। প্রমা সুন্দর করে প্রকাশ করেন, এটাই আমাদের সৌন্দর্য।
ভালো লাগে শিক্ষার্থীদের কথাগুলো। অতঃপর এই ভালো লাগা নিয়েই আমি দৌড়াই।...জয়তু ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। জয়তু ত্রাণ কর্মসূচি।