রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ‘পঞ্চকবির গানে ঋতুবন্দনা’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: লেখক

‘বাংলা আমার, স্বদেশ আমার, বাংলাকে ভালোবাসি।
ছয় ঋতুতেই তৃপ্ত হৃদয়, খুশির ভেলায় ভাসি’

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের ছয়টি ঋতু প্রাকৃতিক নিয়মে বিচিত্র রূপ আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। এদের আবির্ভাবে বাংলাদেশ অপরূপ প্রাকৃতিক লীলা-বৈচিত্র্যে মেতে ওঠে, নৈসর্গিক দৃশ্যের পথ পরিবর্তিত হয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় কখনো‌ রুদ্রমূর্তি ধারণ করে প্রকৃতিতে ধ্বংসলীলা চালায়, আবার কখনো দখিনা মলয়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয় স্বর্গীয় অনুভূতি। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য কবি, লেখকের সাহিত্যের রসদ জোগায়, যুগে যুগে আবেগ ও সৌন্দর্যের চেতনাকে আন্দোলিত করে।

ঋতুবৈচিত্র্য নিয়ে কবিতা লেখেননি—এমন কবি খুব কমই আছেন। পঞ্চকবি নামে খ্যাত বাংলা সাহিত্যের পাঁচজন প্রভাবশালী কবিও তাঁদের কবিতা, গানে ঋতুবন্দনা করে গেছেন। পঞ্চকবি হলেন বাংলা সাহিত্যের পাঁচজন কবি, যাঁরা কবিতা লেখার পাশাপাশি একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাঁরা হলেন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদ সেন। তাঁদের কবিতা বা গান একদিকে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে, আরেক দিকে রূপসী বাংলার স্বরূপ সম্পর্কে পাঠকের মননে সুধারস নিঃসৃত করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ এবার আয়োজন করল পঞ্চকবির গানে গানে ঋতুবন্দনা অনুষ্ঠান। ৬ নভেম্বর বিকেল চারটায় ক্যাম্পাসের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা কলাভবনের গ্যালারি কক্ষে বিভাগের শিক্ষার্থী ও অতিথিদের উপস্থিতিতে জমকালো এ অনুষ্ঠানে গানে গানে ষড়ঋতুর স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন বাংলা বিভাগের শিল্পীরা। সঞ্চালনায় ছিলেন সৈয়দ ইবরাহিম নয়ন ও ফারজানা আক্তার মীম।

অতুলপ্রসাদ সেনের ‘বধূ এমন বাদলে তুমি কোথা?’ গানটি পরিবেশন করেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাজুল রাব্বি। মাসুদা মুক্তির কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘মলয় বাতাসে ভেসে যাবো শুধু’ গানটি। সুললিত কণ্ঠে সাজিদ হোসাইনের ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে’ নজরুলসংগীতটি মুগ্ধতা ছড়ায় উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-- হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে আঁকা’ গানটি দরদমাখা কণ্ঠে পরিবেশন করেন বিশাহ তাসনিম ঐশী। ‘মেঘের দল বেঁধে যায় কোন দেশে, ও আকাশ, বল আমারে’ গানটি পরিবেশিত হয় ডলি বর্মণের কণ্ঠে।

এ ছাড়া পঞ্চকবির ঋতুসংক্রান্ত বিখ্যাত সব গান পরিবেশন করেন এহতেশাম রিদওয়ান, মাহবুব আলম মোহন, সজীব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার প্রমুখ‌। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ চমক ছিল বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া খানমের কণ্ঠে পরিবেশিত গান ‘আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে‌’। তাঁর সুললিত কণ্ঠে গাওয়া গান মুগ্ধ করে শ্রোতাদের।

বিভাগের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা তানিয়া সরকারের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় ঘণ্টাব্যাপী এ আয়োজন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে করা বিভিন্ন সময়ে ব্যতিক্রমী সব আয়োজনের সাক্ষী হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন ছিল ‘পঞ্চকবির গানে ঋতুবন্দনা’। উপভোগ্য ও শিক্ষণীয় এ অনুষ্ঠান বাংলা সাহিত্যের শক্তিশালী পঞ্চকবিকে শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে স্মরণ করে‌।

লেখক: শাহ্ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।