ঢাবিতে স্বপ্নপূরণের দীর্ঘ পথের খণ্ডাংশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল
ফাইল ছবি

গত বছরের ৪ জুন সকাল ৯টার বাসে চেপে ছোট্ট একটা শহর থেকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ব্যস্ততম রাজধানী শহর ঢাকায় আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে। বিশাল এ শহরে নিজের ঠিকানা খুঁজতে উঠে পড়ি ঠিকানা পরিবহনে। দাদার কাঁধে ছিল আমার বইয়ের ভার আর দুই ভাইবোনের চোখে ছিল হাজারো স্বপ্ন।

১০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়। স্পষ্ট মনে আছে, জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে গিয়ে উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের দুই তলায় দ্বিতীয় শ্রেণির একটি ক্লাস রুমে বসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিই। এরপরে ২৫ দিন গত ১৯ বছরের জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময় কাটাই। প্রতি মুহূর্তে ভয় হতো শৈশবের স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলার।

এ সময়টাতে আমাকে মূলধারায় ধরে রাখার মতো অসম্ভব কাজটি করেছিল দাদা ও মা। অবশেষে সব হতাশার অবসান হয় ৪ জুলাই। ওই দিন প্রকাশিত হয় ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। সেদিন আমি, দাদা ও মা তিনজনই কেঁদেছিলাম আনন্দে। সুযোগ পেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির।

টিএসসি, কলাভবন, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চারুকলা অনুষদকে নিজের মনে হয় প্রথমবার ১১ অক্টোবর। কারণ, ওইদিন আমি প্রথম প্রাণের ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন হয়ে এসেছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার এ পথ যেমন ছিল দীর্ঘ, তেমনই ছিল সংগ্রামময়।

তবে আমি সৌভাগ্যবতী; কারণ, আমার এ সংগ্রামময় পথে কোনো আঘাত আমায় ছুঁতে পারেনি। আমার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমার দাদা, মা, বাবা, ও শিক্ষকেরা। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন আমার দাদা। জীবনের যাত্রাপথে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য লাল বাসের টিকিটটা আমার দাদা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, তিশা সাহা, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২২, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়