প্রেরণার এক দুপুর…
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ‘শাহবাগ ইউনাইটেড একাডেমি’। ৮ নভেম্বর ছিল একাডেমির এক অনন্য দিন। চারদিকে নভেম্বরের নরম রোদ। শত শত শিক্ষার্থীর আনন্দ-উচ্ছ্বাস, কৌতূহল আর স্বপ্নে ভরে উঠেছিল একাডেমি প্রাঙ্গণ। এ যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর এলাকার বিশিষ্টজনদের এক মিলনমেলা। সবাই জড়ো হয়েছিলেন ‘তারুণ্যের স্বপ্ন-আলোকিত ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে এক স্বপ্নের অনুষ্ঠানে।
গুণীজন ও শিক্ষকদের আলোচনায় উঠে আসে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জীবনবোধ, দেশপ্রেম, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সর্বোপরি ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার গল্পসহ নানা বিষয়।
শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন, মো. সাহাবুল ইসলাম, মো. ওবাইদুল আল-মামুন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এম লিয়াকত হোসেন, টিপু সুলতান, আশফাকুজ্জামান ও এস এম তানিম আহমেদ শাওন।
সম্মানিত আলোচকেরা একে একে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন জীবনের আলো, সততা, অধ্যবসায় আর মানবিকতার কথা। তরুণেরা কেমন স্বপ্ন দেখবে। ভবিষ্যতে কীভাবে আলোকিত ও সমৃদ্ধ মানুষ হবে, সেসব নিয়ে কথা বলেন।
কেউ বলেন, শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, স্বপ্ন যেন সত্য হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সাধনা করতে হবে। সমৃদ্ধ মানুষ হতে হলে নিজের ভেতর জ্বালতে হবে আলো। সর্বোচ্চ দেশপ্রেম হলো নিজের কাজটি ঠিকভাবে করা।
আবার কেউ বলেন, মোমবাতি হতে হলে আগে নিজেকেই পুড়তে হয়। জীবনকে জানা যায় নানাভাবে। তবে অক্ষর ও শব্দের মধ্য দিয়ে জীবনকে জানাই হলো শ্রেষ্ঠ জানা। বই লেখকদের আত্মার আলো। এ জন্য শিল্পসাহিত্যের বিভিন্ন অনুষঙ্গের সঙ্গে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়তে হবে। দেখতে হবে সৃজনশীল নাটক, সিনেমা। শুনতে হবে মানবিক সংগীত। গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করতে হবে। এমন নানা আলোচনায় অনুষ্ঠানটি এক মানবিক প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীরা গেয়েছে গান। কেউ আবৃত্তি করেছে প্রিয় কবিতা। কেউ আবার নাচে মুগ্ধ করেছে সবাইকে। মঞ্চজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তরুণ প্রাণের সুর-ছন্দ-হাসি-গান। আর তাদের চোখে ছিল আকাশ ভরা স্বপ্ন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করে তানহা মাহমুদ। পবিত্র গীতা পাঠ করে পৌলমী মণ্ডল। সংগীত পরিবেশেন করে রিচি খানম, পৌলমী মণ্ডল, ঋতু ও তার দল। নাচ পরিবেশন করে শিশুশিল্পী তনয়া তাসনীম তুবা। আবৃত্তি করে নূর নাহার আঁখি ও লামিয়া আফরিন কথা। বক্তব্য দেয় বিনতি খানম, তাসনীম জেবা।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতিরানী সাহা, শাহানারা খাতুন, স্বপ্না খানম, রত্না পারভীন, শিবা রানী মণ্ডল, রুমনা খাতুন ও সুসমিতা রানী।
সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুশফিকুর রহমান, সমাজসেবক আবু সাঈদ, ইকরাম হোসেন, তৈয়বুর রহমান, এনামুল হক, আবু ওবায়দা বিদ্যুৎ, বখতিয়ার মোল্যা, শেখ আলীমুল রাজীসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহপ্রধান শিক্ষক মো. মানছুর আলী খান। কারিগরি সহায়তায় ছিলেন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. মেহেদী হাসান। অনষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহবাগ ইউনাইটেড একাডেমির প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গুণীজনদের প্রাণোচ্ছল উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে এক প্রেরণার উৎসব।
শাহবাগ ইউনাইটেড একাডেমির সেদিনের আয়োজন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল আলোকিত মানুষ হওয়া স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন দেখানোর এক অপূর্ব মিলনমেলা।
*লেখক: আশফাকুজ্জামান, কবি, লেখক, সংগঠক