ভালোবাসা, ত্যাগ আর দায়িত্বের অনন্য প্রতীক বাবা

প্রতীকী ছবি

বাবা—এই শব্দটি আমাদের জীবনে এক অদ্ভুত দৃঢ়তার নাম। মা যেমন আমাদের জীবনযাত্রার আবেগ, তেমনি বাবা হচ্ছেন জীবনের সেই অবিচল ছায়া, যিনি কখনও সামনে আসেন না, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে নীরবে পাশে থাকেন। তাঁর ভালোবাসা খুব কমই কথায় প্রকাশ পায়, কিন্তু তার গভীরতা অনুভব করা যায় প্রতিটি কাজে, প্রতিটি ত্যাগে। বাবা হচ্ছেন সেই মানুষটি, যিনি সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে নিজের আজকে উৎসর্গ করেন। যিনি নিজের চাওয়াকে পিছনে ফেলে সন্তানের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দেন, যিনি জীবনের প্রতিটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। 

বাবা দিবস, যা প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয়, সেই নিঃশব্দ, নির্লিপ্ত, কিন্তু অসীম গভীর ভালোবাসারই একটি ছোট্ট স্বীকৃতি। বাবার ভালোবাসা অনেকটা পাহাড়ের মতো—নীরব, স্থির কিন্তু অটল। তিনি হয়তো মায়ের মতো প্রতিদিন আমাদের কোলে তুলে নেন না, কিংবা আমাদের চোখে চোখ রেখে বলেন না, “ভালোবাসি,” কিন্তু প্রতিটি দায়িত্ব, প্রতিটি চিন্তা ও পরিশ্রমে তাঁর ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। ছোটবেলায় যখন হাঁটতে শিখি, তখন বাবা হাত বাড়িয়ে দেন। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনি পাশে থাকেন। আমরা যখন প্রথমবার বাইসাইকেল চালাতে শিখি, তখন বাবা পেছনে দাঁড়িয়ে সাহস জোগান। 

বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে লেখক
ছবি: লেখকের পাঠানো

জীবনে প্রথমবার কোথাও হারিয়ে গেলে, তিনিই খুঁজে এনে দেন দিশা। বাবা মানেই একজন অদৃশ্য পাহারাদার, যিনি সারাজীবন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত থাকেন, নিজেকে ভুলে গিয়ে। আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে আমরা প্রায়ই বাবা-মায়ের অবদানকে পেছনে ফেলে দিই। আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, ঘরের এক কোণায় বসে থাকা সেই মানুষটিকে ভুলে যাই, যিনি আমাদের পৃথিবী গড়তে অজস্র রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। 

বাবা দিবস হলো সেই ব্যতিক্রমী সুযোগ, যখন আমরা একটু থেমে, একটু ফিরে তাকিয়ে তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পারি। হয়তো তিনি কিছু চান না, কিন্তু একটি ছোট্ট ‘ধন্যবাদ’ বা ‘ভালোবাসি বাবা’ বলে ফেলা তাঁর কাছে হয়ে উঠতে পারে এক অমূল্য সম্পদ। এই দিনটি উদযাপনের জন্য বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই। বাবা হয়তো এমন মানুষই যিনি উপহার পেলে লজ্জা পান, কিংবা বাহুল্য একেবারেই পছন্দ করেন না। তবে একটি চিঠি, ছোট একটি কবিতা, বা পরিবারের সঙ্গে বসে এক কাপ চা খাওয়ার সময়টুকু—এই ছোট ছোট মুহূর্তই তাঁর কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। বাবার প্রিয় খাবার রান্না করে একটি সারপ্রাইজ দেওয়া, কিংবা ছোটবেলার কিছু স্মৃতি নিয়ে কথা বলা—এই সব কিছুতেই লুকিয়ে থাকে হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসা। 

অনেক সময় বাবারা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক হয়ে ওঠেন—শেখান কীভাবে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়, শেখান কীভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু করতে হয়। বাবা দিবস শুধু একদিনের জন্য তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য নয়, বরং এটি এক ধরনের স্মারক—যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই মানুষটির উপস্থিতি কতটা অপরিহার্য। আমাদের সাফল্যের পেছনে, আমাদের হাসির পেছনে, আমাদের সাহসের পেছনে যে মানুষটি চুপচাপ থেকে যান—তাঁকে অন্তত একটি দিনে হলেও জানানো উচিত, “তুমি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।” আমরা হয়তো সবসময় তাঁর মতো হতে পারি না, কিন্তু তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টাটুকু করতে পারলেই হয়তো তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। 

আজকের দিনে আসুন আমরা বাবাদের সম্মান জানাই, তাঁদেরকে একটু সময় দিই, আর এই দিনটি উদযাপন করি গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর হৃদয়ের সমস্ত আন্তরিকতা দিয়ে। কারণ, একজন বাবা সারা জীবন আমাদের জন্য যা করেন, তার তুলনায় আমরা যত কিছুই করি না কেন, তা হবে সামান্য। তবু এই সামান্যটুকুই হোক সবচেয়ে বড় ভালোবাসার প্রকাশ। 

লেখক: হাসিবুর রহমান, শিক্ষার্থী