জ্বালানি–সংকট অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কি বড় চ্যালেঞ্জ!
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পরিচালকেরা বিদ্যুতের মূল্য বাবদ সরকারের কাছ থেকে এখনো ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বুঝে পাননি। খবর ইউএনবি।
সাবেক সরকারের ভুল জ্বালানি নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা উপেক্ষিত রয়েছে। সরকারের পতনের পর যা আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে গৃহীত একের পর এক বিতর্কিত নীতি, আমদানিনির্ভরতা ও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত এ সংকটের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মাত্র ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জ্বালানি খাতে গত সরকারের সীমাহীন উদাসীনতা প্রমাণ করে।
বর্তমান সময়ে দেশের জ্বালানির মজুত কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে না হতেই সাধারণ মানুষসহ শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ উদ্বিগ্ন, বিশেষত তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অবস্থায় দেশের জ্বালানি খাতে সংকট আরও বাড়তে পারে। পিছিয়ে যেতে পারে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের উদ্যোগসহ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প। আপাতত যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাবে, তাই নতুন বিনিয়োগও কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমদানিনির্ভরতায় গ্যাস খাতে চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এতে শিল্প উৎপাদন চরম হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বিগত সরকার তা উপেক্ষা করে একটি ভঙ্গুর আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত তৈরি করে রেখেছে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন–ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গভীর সংকট বাড়লে দেশের বাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে দেশের ডলার–সংকটে আর্থিক পরিস্থিতি আমদানি সহায়ক নেই।
গত সরকার সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিশেষ বন্ড চালু করলেও সুফল মেলেনি। পাওনা পরিশোধের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও পাহাড়সম দেনা থাকায় জ্বালানি সরবরাহকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অপারেশনাল ইস্যু এবং জ্বালানি–সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সবকিছু এখন লোডশেডিংয়ে ভূমিকা রাখছে। শেখ হাসিনার সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য পলিসি তৈরি বা গবেষণা এবং প্রাথমিক খরচের জন্য ১০০ কোটি ডলার বিগত সময়ে বরাদ্দ দিলেও এই অঙ্কের টাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বিকল্প বড় প্রকল্পের জন্য খুবই সামান্য। এখানেও বড় দুষ্টক্ষত সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে কার স্বার্থে! এসব জঞ্জাল মোকাবিলা করায় অন্তর্বর্তী সরকার খুব বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে।আমদানিনির্ভরতা ও ডলারের সংকট আরও চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে। প্রচুর ঋণের বোঝা চাপানোয় এসব সংকট মোকাবিলা করে জ্বালানি সরবরাহ খুব চ্যালেঞ্জিং হবে।
জ্বালানি বিশ্লেষক ও ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমামের মতে, বিগত সরকার দেশের জ্বালানি খাত এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলে রেখে গেছে, যেখান থেকে নতুন সরকারের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির জোগানের নিশ্চয়তা, বিদ্যমান চুক্তির আওতায় জ্বালানি আমদানি ও চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্রে ও স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ জ্বালানি খাতে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগও কমার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে জ্বালানি খাতে সংকটগুলো আরও প্রকট হতে পারে।
লেখক: রিপন আশরাফ, গবেষক
নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]