সমাবর্তন, তুমি কোথায়
আসছে মে মাসের ৯ তারিখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে গৌরবের, শিক্ষকদের আরও দায়বদ্ধতা বেড়ে যাওয়ার সময়। এই ১৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিল্প–সাহিত্যকে দিয়েছে এমন অনেক নজির আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগোচ্ছে। জাতীয় কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয় বলে কথা, পিছিয়ে থাকার সময় কোথায়?
কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বয়স হলো, বিশ্ব-দরবারে নিজের পরিচয় বৃদ্ধি করার প্রয়াস চলমান যেখানে, এত এত গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন যে ক্যাম্পাস থেকে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল একটি সমাবর্তন আয়োজন হয়েছে। এটি মানার অযোগ্য। সমাবর্তন পাওয়া অধিকার। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এর মাধ্যমে একাডেমিক জীবনের সমাপ্তি শেষ বুঝিয়ে ক্যারিয়ারে সম্ভাবনার সূচনা করে থাকে। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন পাওয়ার অধিকার থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এর কারণই–বা কী। এবার কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো সমাবর্তন আয়োজন করেছিল ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল। সম্প্রতি তো এই সমাবর্তনের সাত বছর হয়ে গেল। যাহোক, ওই সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন পাঁচটি ব্যাচের ১ হাজার ৩৯৯ গ্র্যাজুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতির পাতায় ওই দিন এখনো অমলিনই রয়ে গেছে।
এখন হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, অন্তত আটটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছেন। তাঁদের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের কম হবে না। এত শিক্ষার্থী সমাবর্তন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন। আবার আশায়ও রয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তন আয়োজন করছে না।
সমাবর্তন নিয়ে শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালের কিছু বক্তব্য আমলে নেওয়া যাক। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে। সমাবর্তন শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়, এটি সত্য নয়। যেটুকু শিক্ষার্থীদের জন্য, এর চেয়ে বেশি মা-বাবা ও অভিভাবকদের জন্যও। পৃথিবীর সব জায়গায় এ উৎসবটি করেন গ্র্যাজুয়েটদের অভিভাবকেরা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যদের সমাবর্তন চেয়ে চেয়ে দেখবে, আর নিজেদের বেলায় কিছুই পাবে না, এমনটি কেউ চাননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমলে নেয় না, এটা বড় প্রশ্ন। এটা অবশ্যই বড় বড় প্রজেক্ট নেওয়া বা বড় কোনো পরিকল্পনার মতো করে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল।
দ্বিতীয়ত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেকটি বিষয় দৃষ্টিগোচরে এসেছে। গত বছর ঘটা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সেখানে জানানো হয় যে রাষ্ট্রপতির থেকে সময় নেওয়া হয়েছে। এরপর কমিটিও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সমাবর্তন আর হয়নি। পরে সবাই চুপসে যায়।
তৃতীয়ত, আরেকটা কথা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন–সংগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দাবিদাওয়া তুলে থাকেন। কিন্তু গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছেন এমন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে চলে আসেন, অন্যত্র যান বা চাকরিতে ঢুকে যান। তাঁদের পক্ষে এটা নিয়ে কতটুকুই–বা প্রেসারাইজড করা সম্ভব। যদি না যাদের বোধোদয় হওয়া উচিত, তাদের না হয়।
শেষ করব শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালের আরেকটি মতামত দিয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন না হওয়া নিয়ে তিনি বলেছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর পর সমাবর্তন করা হয়। গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে আয়োজনটি অনেক জটিল হয়ে পড়ে। এ জন্য দরকার নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তন আয়োজনে মনোনিবেশ করবে বলেই মনে করি। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের পূর্ণতা দান করা। স্মার্ট ক্যাম্পাসে স্মার্ট সমাবর্তনই যেন হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের বলতে না হয় ‘সমাবর্তন, তুমি কোথায়।’
লেখক: সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]