সিলেটের বাল্লা ট্রেন, একটি লোকাল ট্রেনের হারিয়ে যাওয়া
বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রেলওয়ে স্টেশন, যা হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল, তার মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন অন্যতম। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে বাল্লা পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হয়। এ সময় এ লাইনের স্টেশন হিসেবে বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ চালু হলে স্টেশনটি জংশন স্টেশনে রুপান্তরিত হয়। সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা–পাতা রপ্তানি, বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানি করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ।
শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট চারটি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে)। এগুলো হলো হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট সাতটি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে)। এগুলো হলো বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপাড়া ও বাল্লা।
২০০৩ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রেলপথটি।
আগে চা-পাতা রপ্তানি এবং বাগানের রেশন, জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানি করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। বর্তমানে অস্তিত্ব বিলীনের পথে রয়েছে রেলপথটি।
স্বাধীনতার পর এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে এ লাইনটি প্রথমবার বন্ধ হয়। পরে চালু করা হলেও ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আবার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০০২ সাল থেকে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ রুটের জনপ্রিয় ট্রেন ছিল বাল্লা লোকাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বাল্লায় যাঁরা ভ্রমণ করতেন, তাঁদের কাছে একটি প্রবাদ খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, ‘বাল্লা চলো, আল্লাহ আল্লাহ বলো’।
এই ট্রেনের সর্বশেষ গন্তব্য বাল্লা স্টেশন ছিল বলে সবাই এটাকে বাল্লা লোকাল বলেই ডাকতেন। যাত্রীর চাহিদা থাকার পরও কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এই বাল্লা লোকাল ঠিক কী কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, তা কেউ জানে না।
লেখক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট