অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিকশিত নেতৃত্বের পথে অগ্রযাত্রা
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’—এই প্রতিপাদ্য কেবল একটি ধারণা নয়; এটি একটি প্রয়োজন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সমাজের প্রতিটি সদস্যের সমান সুযোগ ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বৈশ্বিক উদাহরণ
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো: নরওয়ে, সুইডেন, ও ডেনমার্কে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, এবং দৈনন্দিন জীবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিমালা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুইডেনের ‘ইনক্লুসিভ ডিজাইন’ ধারণা অনুযায়ী, প্রতিটি অবকাঠামো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি হয়।
জাপান: এখানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতি ও আইনি কাঠামো
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে, যা প্রতিবন্ধী জনগণের অধিকারের সুরক্ষা এবং তাদের উন্নয়নে বড় একটি মাইলফলক। এই আইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাচল, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে।
আইনের মূল দিকসমূহ
১. অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা: সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার নিশ্চয়তা।
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. কর্মসংস্থান: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
৪. প্রযুক্তি ও অবকাঠামো: সব স্থাপনা ও প্রযুক্তিকে প্রতিবন্ধী-সহায়ক হিসেবে উন্নয়ন।
৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধী জনগণের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে উদ্যোগ।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
সত্ত্বেও, আইন বাস্তবায়নে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। জনসচেতনতার অভাব, প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের সীমাবদ্ধতা, এবং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সুযোগের অভাব এই উন্নয়নকে ব্যাহত করছে।
করণীয়
১. আইন বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা: সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রযুক্তির ব্যবহার: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা।
৩. অবকাঠামোগত উন্নয়ন: প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাকে ‘ইনক্লুসিভ ডিজাইন’ নীতিমালা অনুসরণ করে গড়ে তোলা।
৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগণের সাফল্যের গল্প প্রচার করা।
আমাদের শপথ
আসুন, আমরা সবাই মিলে শপথ করি—প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্ভাবনাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব। প্রতিবন্ধকতা নয়, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করাই আমাদের দায়িত্ব।
শুভেচ্ছা বার্তা
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য এক সমান ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা।
লেখক: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী শিক্ষক, কোন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা।