দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন
২০২২ সালে এসে আমরা খেয়াল করি, আমার সোনার বাংলাদেশ খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র, বাসস্থান, উন্নত সংস্কৃতিসহ অন্য ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে। আপনারা কি জানেন, কেন দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না? কেন এ দেশ অন্য দেশের তুলনায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পিছিয়ে? সবকিছুর মূলে দেখি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা দেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশ থেকে দ্রব্য সরঞ্জাম আমদানি করে থাকি, কিন্তু একটি দেশের মেরুদণ্ড শক্তিশালী করার জন্য উন্নত শিক্ষা–সংস্কৃতি আমদানি করতে ব্যর্থ। ভাবছেন কীভাবে শিক্ষা আমদানি করবেন?
একটু খেয়াল করবেন, আজকের উন্নত চীন তাদের দেশের ছেলেমেয়েদের উন্নত শিক্ষার জন্য বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠায়। এ ছাড়া জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এ কাজ করে থাকে। সেই ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সেই সব দেশে জ্ঞান আহরণ করে পরবর্তীকালে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে নিজ দেশের কাজে মনোযোগ দেন।
আজকের শক্তিশালী দেশ চীনের অনেক মেধাবী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন। সেই দেশের জ্ঞান আহরণ করে তাঁরা আজ নিজ দেশকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরেছেন। আজ জাপান রপ্তানিনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে।
অথচ যুদ্ধের পর থেকে আমাদের দেশ নানা সমস্যার মুখোমুখি। আজ দেখা যায়, নোংরা রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হয় না। যাঁরা নিজস্ব অর্থায়নে বাইরের দেশে অধ্যয়ন করতে যান, তাঁদের দেশে নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের আছে বলে জানা নেই। সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ায় দেশ দক্ষ জনশক্তিগুলো হারাতে বসেছে। যদি রাষ্ট্র সেই মেধাবীদের যোগ্য স্থানে বসাত, তাহলে দেশটা আজ অনেক দূর এগিয়ে যেত। আজও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো মানের শিক্ষার সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক পিএইচডিধারীরা নিয়োগ পাচ্ছেন না। তাহলে কীভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে?
আপনারা কি মনে করেন, দেশে দক্ষ মেধাবীরা নেই?
আমি বলব আছে। তবে তাঁদের যোগ্য স্থান দেওয়া হয় না। যেখানে দেশের বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষকেরা থাকবেন গবেষণা, শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে তাঁরা ব্যস্ত আছেন ছাত্ররাজনীতি নিয়ে, শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে। এতে দেখা যায়, এ দেশের ছেলেমেয়েদের মেধা থাকা সত্ত্বেও তৈরি হচ্ছে না দক্ষ জনশক্তি।
অথচ বাইরের দেশগুলোতে দেখুন, তারা দক্ষ প্রজন্ম তৈরি করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, আবার তাদের সে দেশের কাজে নিয়োজিত করছে।
আমার মনে হয়, সেই দেশগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
খেয়াল করলে আজ দেখা যায়, দেশে কোনো ভালো মানের গবেষক, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ কিংবা বিজ্ঞানী নেই। একটি দেশ যখন শিক্ষা–সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে, তখন কীভাবে দক্ষ জনশক্তি আশা করা যায়?
তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই উচ্চতর জ্ঞান অর্জনে পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। অনেকেই দেশে এসে নিজ দেশের জনশক্তিতে কাজ করছেন। রাষ্ট্রের কাছে একটা কথা বলার আছে, তা হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে চাইলে অন্য দেশ থেকে যেভাবে পণ্য আমদানি করে থাকি, তেমনি শিক্ষা–সংস্কৃতি আমদানি করা হোক। তাহলে আমার সোনার বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। নয়া উপনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসবে।
আমদানিনির্ভর না হয়ে রপ্তানিনির্ভর হতে হবে। স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, এটাই প্রত্যাশা।
মো. রাশেদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ