কল্পনার জাদু
‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,...
বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতাটি আমাদের সবারই পড়া। ছোটবেলায় এই কবিতা পড়ে আমরা অজানাকে আবিষ্কারের নেশায় বিভোর হতাম। ভাবতাম, কীভাবে পুরো বিশ্বকে মুঠোয় পুরে নেব?
আজ আর সেই ভাবনার অবকাশ নেই। গ্লোবালাইজেশনের যুগে ইন্টারনেট সত্যিই পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।
ধন্যবাদ কবিকে, তার কল্পনাই পৃথিবীকে বিশ্বগ্রাম বানিয়েছে।
আবার রবীন্দ্রনাথের কথাই ভাবুন না কেন, তার ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটি।
যেখানে খোকা একাই ত্রাতা হয়ে তার মাকে শত ডাকাতের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। সিনেমায় কিংবা বাস্তবে হিরো বা নায়কের ধারণা কি এ থেকে আসেনি?
সাহিত্য কিন্তু বেশ খানিকটা কল্পনানির্ভর। মননির্ভর।
আমরা সবাই মনের রাজ্যে রাজা। কত কিছু ভেবে যায় মন। সচেতন, অচেতন কিংবা অবচেতন একেক অবস্থায় একেক ধরনের ভাবনায় মশগুল থাকে। আমাদের মন এক মুহূর্তের জন্যও স্থির থাকে না।
এমনকি ঘুমের সময় নানা কিছু ভেবে যায়। ভাবতে ভাবতে স্বপ্নতে পরিণতি পায়। কল্পনা হলো আমাদের জেগে জেগে দেখা স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখার সময় শরীর সম্পূর্ণ অচেতন থাকে, কিন্তু কল্পনার সময় শরীর অবচেতন থাকে। অবচেতন মনের ভূমিকা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কল্পনাশক্তি যত উন্নত, অবচেতন মনের ভাবনা ঠিক ততটাই উন্নত।
কিন্তু কল্পনা আসলে কী?
কল্পনা মনে মনে তৈরি করা এমন এক প্রতিচ্ছবি, যা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। এটা মনের তৈরিকৃত এক বিশেষ ক্ষমতা, যা কোনো বিষয় বা ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে, তার অনুভূতি জাগায়। কল্পনা নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা জাগায়। কল্পনায় পুরো পৃথিবীকে অবলোকন করা সম্ভব। তবে আকাশ-কুসুম কল্পনা করা যাবে না। তাহলে এটা বরং অলসতা ও হতাশার সৃষ্টি করবে।
প্রখর কল্পনাশক্তির অধিকারী ব্যক্তি পৃথিবীকে বদলে দিতে পারেন। স্যার আইজ্যাক নিউটন কিন্তু তাঁর মাথার ওপর আপেল পড়াতে Gravity-এর ধারণা পাননি; বরং তাঁকে কল্পনা করতে হয়েছে যে কেন এটি ওপরের দিকে না উঠে নিচে পড়ল; অর্থাৎ পরিবর্তনের শুরু হয় ছোট ছোট কল্পনা থেকেই।
উন্নত কল্পনা সৃজনশীলতা বাড়ায়। এ জন্যই আইনস্টাইন বলেছেন, ‘Imagination is more powerful than knowledge’; অর্থাৎ কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে শক্তিমান।
টাইটানিক ও অ্যাভাটারখ্যাত, বিশ্বনন্দিত চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন, কিন্তু কল্পনা নিয়ে বেশ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, কল্পনা বাস্তব ঘটনার বহিঃপ্রকাশে অকল্পনীয় এক শক্তি। তাই কল্পনায় আপনি কখনো সীমাবদ্ধতা আনবেন না। বাধা এলেও আপনার কল্পনাকে আপনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এভাবেই নতুন কিছু সৃষ্টি হবে।
আমরা যদি কল্পনা করি যে কী বানাতে চাই বা কী অর্জন করতে চাই, তাহলে এই কল্পনাই অর্জনের পথে ছুটে চলার রাস্তা দেখাবে। তবে এ জন্য অবশ্যই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।
নির্দিষ্ট চিন্তার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে কল্পনার দুয়ার খুলে দিতে হবে।
লেখক: রবিউন নাহার তমা, শিক্ষক ও লেখক
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]