পার্মানেন্ট মার্কার

কয়েক বছর আগের ঘটনা। সবে দশম শ্রেণিতে পড়ি। নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি সকালে গণিত প্রাইভেট পড়তাম আসাদ স্যারের কাছে। বলে রাখি, আমি বরাবরই গণিতে কাঁচা, যদিও মানবিক বিভাগ ও উক্ত প্রাইভেট গ্রুপে ভালো ছিলাম। স্যার প্রথম দিকে ব্ল্যাকবোর্ডে গণিত করাতেন, পরে সুবিধার কথা বিবেচনায় হোয়াইটবোর্ড আর মার্কারের ব্যবস্থা করেন। বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিল। তারপর মাঝেমধ্যেই মার্কারের কালি সংকটে পড়তেন। এতে মাঝে মধ্যে ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করতে হতো। কালির সংকটের বিশেষ কারণ আমাদের স্থানীয় বাজার ও আশেপাশের দোকানে মার্কার পাওয়া যেত না। স্যার সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসায় গেলে উপজেলা সদর থেকে কালি ও মার্কার নিয়ে আসতেন।

একদিন স্যার ক্লাস নিচ্ছেন অনুপাতের ওপর। চারটি গণিত সমাধানের কথা ছিল, তিনটি শেষ, চতুর্থটার এক লাইন লিখতে না লিখতেই কালি শেষ। এখনো দুটো ব্যাচ পড়ানো বাকি। তারপর স্কুলের ক্লাস তো আছেই। স্যার বলতে লাগলেন, কেমন একটা এলাকায় তোমাদের, পড়াতে আসছি সামান্য মার্কার পর্যন্ত পাওয়া যায় না, চিলমারী থেকে আনতে হয়। এমন সময় আমি বলে উঠলাম স্যার, আমার বাড়িতে বেশ কয়েকটি মার্কার আছে, পরের ক্লাসে নিয়ে আসব। স্যারও সায় দিলেন।

বাড়িতে সে সময় মহিদেব সংস্থার স্কুল ছিল, প্রাইমারি পর্যন্ত। বিভিন্ন রং ও আকারের মার্কার ছিল; স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজি বর্ণ—আরও নানা প্রজেক্ট এঁকে শ্রেণিকক্ষের নানা প্রান্তে টানিয়ে দেওয়ার জন্য। সেখান থেকে একটি মার্কার স্যারের জন্য নিয়ে যাই।
সেদিন শুক্রবার, লগ ও সূচকের ওপর প্রথম ক্লাস। স্যার কক্ষে আসতেই মার্কার দিই, যদিও তাঁর কাছে মার্কার ছিল। স্যার অংক করতে লাগলেন আমার দেওয়া মার্কার দিয়ে। প্রথমটার সমাধান শেষ, আবার বোঝালেন। এবার মুছে ফেলার পালা। ওমা, এতো দেখি মোছা যাচ্ছে না। সবাই হো হো করে হাসতে লাগলেন একে অপরের গায়ে পড়ে, এমনকি স্যার নিজেও হাসলেন। আমি মুচকি মুচকি হাসলাম, সঙ্গে লজ্জার ভাব। স্যার মার্কার ভালো করে পরখ করলেন, ‘তবে রে, এতো দেখছি পার্মানেন্ট মার্কার!’

স্যার একজনকে দ্রুত দোকানে পাঠলেন সার্ফ এক্সেল আনতে। দুজন বোর্ড নামিয়ে টিউবওয়েলের কাছে নিলাম। অনেক ঘষামাজার পরে হোয়াইট বোর্ড আগের চেয়েও ধবধবে করলাম। জায়গামতো রাখলাম; তখন আর গণিত করা হলো না। আবার একটা অট্ট হাসির ঢেউ উঠল।

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, মেয়েরা ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল, আমরা ছেলের দল লুঙ্গিতে মালকাছা দিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তায় দিগ্বিদিক ছুটে  বাড়ি চললাম।

*লেখক: সবুজ আহমেদ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। মেইল অ্যাড্রেস [email protected]