প্রতিবছর নতুন নাম, নতুন মালিকানা—বিপিএলের রূপ বদলাবে কবে
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) যেন প্রতিবছরই নতুন করে শুরু হয়—নতুন নাম, নতুন মালিকানা, নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে। তবু পুরোনো সমস্যাগুলো থেকে যায় আগের জায়গাতেই।
চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের ১২তম আসর, যার ফাইনাল আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
মাত্র পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি, তিনটির নতুন নাম, এর মধ্যে দুই দলের নাম অপরিবর্তিত থাকলেও তিনটির নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বিসিবি জানিয়েছে, ‘মালিকানা বদল হলেও নাম অপরিবর্তিত থাকবে’—তবে বাস্তবে সেটি আবারও ঘটেনি।
এবার চূড়ান্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো হলো—রংপুর রাইডার্স (বসুন্ধরা গ্রুপের টগি স্পোর্টস), ঢাকা ক্যাপিটালস (চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টস, রিমার্ক–হারল্যান), সিলেট টাইটান্স (ক্রিকেট উইথ সামি), রাজশাহী ওয়ারিয়র্স (নাবিল গ্রুপ), চিটাগং রয়েলস (ট্রায়াঙ্গাল সার্ভিস)।
প্রতি আসরেই বিপিএল নতুন মালিকানা ও নতুন নাম নিয়ে হাজির হয় কিন্তু পুরোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পায় না। খেলোয়াড়দের বকেয়া পরিশোধে বিলম্ব, অসম্পূর্ণ কিট সরবরাহ, আয়–ব্যয়ের স্বচ্ছতার অভাব—এসব অভিযোগ এখন নিয়মিত।
খেলোয়াড় ইউনিয়ন (কোড) ও ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, বিপিএল এখন পর্যন্ত একটি পেশাদার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি। এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক কাঠামো এখনো স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য নয়।
বিপিএলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তার অস্থায়ী ফ্র্যাঞ্চাইজি কাঠামো। দলগুলো এক–দুই মৌসুমের বেশি টেকে না। বিনিয়োগকারীরা আর্থিক অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক অস্পষ্টতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে নতুন বিনিয়োগকারী এলেও তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকে না।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রতিবছর নতুন চুক্তি ও শর্তাবলির মাধ্যমে ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্ধারণ করে, যা একটি স্থায়ী ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি কালচার’ গড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিসিবি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, এবার থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ চুক্তি, আর্থিক শর্তাবলি ও খেলোয়াড় সুরক্ষা বিষয়টি লিখিতভাবে নিশ্চিত করা হবে। বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘পূর্ববর্তী সমস্যাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এবার পেশাদার ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনায় যেতে চাই।’
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রতিবছর নতুন সাজে, পুরোনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি নিয়ে শুরু হওয়া বিপিএল আসলে কতটা উন্নত হচ্ছে? খেলোয়াড়দের আস্থা, দর্শকদের আগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ধরে রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থিতিশীলতা।
যত দিন পর্যন্ত বিপিএলের কাঠামো স্থায়ী ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনায় রূপ না পায়, তত দিন পর্যন্ত এটি শুধুই ‘নতুন নামে পুরোনো বিপিএল’ হিসেবেই থেকে যাবে।
*লেখক: শাহারিয়া নয়ন, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগ, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়