‘স্যার’ শব্দটি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা চলছে ‘কর্মকর্তা’ ও ‘কর্মচারী’ শব্দ দুটি নিয়েও। স্যার-ম্যাডাম, সম্মান-অসম্মান, শিক্ষক-অশিক্ষক ইত্যাদি বিষয়গুলো আজকের মূল আলোচ্য বিষয় নয়। বরং দীর্ঘদিনব্যাপী কর্মকর্তা নামধারী একদল অকর্মণ্য লোকের কাণ্ডকীর্তি এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ প্রাসঙ্গিক হবে।

একটি বহুল প্রচলিত ধারণা, কর্মকর্তারা তেমন কোনো কাজ করবেন না। তাঁরা কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করান। কাজ করিয়ে নিতে নিতে তাঁদের একটি বিরাট অংশ কখন যে অকর্মণ্য বনে যান, তা তাঁরা নিজেরাও আন্দাজ করতে পারেন না। ফলে অনেক বড় কর্মকর্তাও তাঁদের কর্মচারীদের জালে ফেঁসে যান। যা হোক, হাল আমলে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকতায় ক্যামেরাম্যান, সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, এডিটর—বহুমুখী পদ বিলুপ্ত হয়ে একটি অভিন্ন পদে এসব যোগ্যতা চাওয়া হচ্ছে। যিনি সব কটি কাজ একা ও দ্রুত করতে পারছেন, তাঁর একক জায়গা তৈরি হচ্ছে। কোনো পেশার কাজ এখন আর নির্দিষ্ট অফিসকক্ষে বন্দী নেই। যে যাঁর পছন্দসই স্থানে বসে কাজ করছেন। এমনকি রেস্তোরাঁ ও অনুষ্ঠানস্থলে বসেও চলছে কাজ।

আরও পড়ুন

কর্মকর্তাদের ‘স্যার-ম্যাডাম’ ডাকতে হবে, এমন নীতি নেই: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

আরও পড়ুন

স্যার ডাকা সম্মানের না অহংকারের, সমাধানের উপায় কী

একসময় অফিসগুলোতে ‘এমএলএস’ নামের এক অবধারিত পদ ছিল। এর অনুপস্থিতিতে অনেক কাজের জরুরি সিদ্ধান্ত হলেও নোটিশ জারি করা সম্ভব হতো না। এ প্রক্রিয়ায় অনেক গোপন সিদ্ধান্ত ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি ছিল। এ পদ এখন বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে চ্যাটজিপিটি নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাইট/অ্যাপটির আলোচনাও তুঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে ‘কর্মকর্তা’, ‘কর্মচারী’ শব্দ দুটি নিয়ে নতুন করে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে। শব্দ দুটি বিলুপ্ত হয়ে ‘কাজের লোক’ তৈরির আভাস লক্ষণীয়। পরনির্ভরশীল কথিত কর্মকর্তাদের বিলুপ্তিও অবধারিত। সে বিবেচনায় সম্মান-অসম্মান মাথায় না নিয়ে ‘কর্মী’ হয়ে টিকে থাকাই বড় যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

আরও পড়ুন

‘স্যার না বলায়’ জেলা প্রশাসকের ক্ষুব্ধ আচরণ, প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচি

এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে, যেখানে অপদার্থ কর্মকর্তা কর্মচারী ও এমএলএস দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিজেদের অযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এখন চ্যাটজিপিটির যুগে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকলে বেকুবি প্রকাশ পেতে সময় লাগবে না। পূর্বে চুরি ধরা না পড়লেও এখন ধরা পড়া সময়ের ব্যাপার।

প্রযুক্তির উৎকর্ষের কালে মগজের তৎপরতা বৃদ্ধি না পেলে বেশিসংখ্যক মানুষের চিরস্থায়ী অকর্মণ্য হওয়ার সম্ভাবনাও প্রকট। একদা মানুষের মূল প্রতিযোগী ছিল মানুষ। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও মানুষের সঙ্গে লড়বে। এখন অলসদের কপালে শনি অবধারিত। চ্যাটজিপিটি স্যার-ম্যাডাম, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিতর্কের অবসান ঘটাবে বলে মনে করি। ফিরিয়ে আনবে কর্মমুখর লোকের সম্মান।

*লেখক: সৈয়দ মিজানুর রহমান, শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

*[email protected] এ লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন