সচেতনতার সঙ্গে কলেজ নির্বাচন করতে হবে

ফাইল ছবি

সদ্য পাসকৃত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সামনে এখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির চ্যালেঞ্জ। এবার এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯। অর্থাৎ মোট ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন পাস করেছে। এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ শিক্ষার্থী।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে রাজধানীকেন্দ্রিক ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার। একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে প্রথম ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির কার্যক্রম চলবে। ২০১৫ সালের আগে ভালো কলেজগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। তখন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উপস্থিত মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভর্তির সুপারিশপ্রাপ্ত হতো। সেখানে এসএসসির জিপিএ কাজে লাগলেও এখনকার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

২০১৫ সালে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পর কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসির জিপিএ সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর নামীদামি কলেজগুলোতে আমরা অনলাইন কর্যক্রম শুরুর পর থেকে দেখে আসছি যে সেখানে শুধু জিপিএ-৫ পেলেই হয় না, বরং সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী হতে হয়। কারণ, আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা সেখানে আবেদন করে। অনেক কলেজ তাদের সর্বনিম্ন জিপিএ নির্ধারণ করে রাখে ৪.৫০, কিন্তু তাদের কলেজে আবেদনকারী সব শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। সংগত কারণে তাদের নির্ধারিত জিপিএর বিষয়টি তখন সামনে আসে না।

অনেক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সেখান থেকে বাদ পড়ে যায়। যেসব শিক্ষার্থী কলেজের সার্বিক অবস্থা না জেনে শুধু সর্বনিম্ন নির্ধারিত জিপিএ দেখে আবেদন করে, তারা শতভাগ বাদ পড়তে পারে। পরে কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়। এ জন্য কলেজের বিষয়ে যারা ভালো জানে, তাদের কাছে গিয়ে কলেজ সম্পর্কে জানা অথবা অনলাইনে ভালো তথ্য পাওয়া যায়, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে কলেজ সিলেকশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী রাজধানীকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করে।

তারা রাজধানীর বাইরে চিন্তাই করতে চায় না। অথচ রাজধানীর বাইরে অনেক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। রাজধানীর বাইরে অনেক বিভাগীয় এবং জেলা শহরে রাজধানীর সমপর্যায়ের কলেজ আছে।

সেসব কলেজ থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। প্রতিবছর কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়ে শিক্ষার্থীরা।

আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি জিপিএ-৫–এর কারণে অনেকে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে না। সংগত কারণে চোখ-কান খোলা রেখে, যারা এ বিষয়ে ভালো জানে তাদের পরামর্শ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক অথবা দুই শব্দের পার্থক্যে অনেক জায়গায় একই নামের দুই কলেজ থাকে।

প্রথম প্রথম শিক্ষার্থীরা কলেজ সিলেকশন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে। অনেকে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় ভুল নামের কলেজ নির্বাচন করে। এসব ঝামেলা এড়াতে কলেজ সিলেকশনের সময় খুব ভালোভাবে কলেজের নাম ও কোড দেখে নির্বাচন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত একমাত্র কলেজটি পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। এ জন্য ভালোভাবে কয়েকটি কলেজ বাছাই করে প্রথম দিকে রাখতে হবে। যেহেতু ১০টি কলেজ নির্বাচন করার সুযোগ আছে, সেহেতু ১০ কলেজ পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কেউ অন্যান্য কোটায় ভর্তি হতে চাইলে কোটা–সংশ্লিষ্ট সব বিষয় অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। অনেক গরিব শিক্ষার্থী আছে। তাদের ভালো কলেজ বিবেচনার পাশাপাশি কলেজের ব্যয়সহ যেখানে থাকবে সেখানকার ব্যয় বহন করতে পারবে কি না নিশ্চিত হতে হবে।

অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম করে না, অর্থাৎ আগের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে, এ রকম কলেজে কেউ ভর্তি হতে চাইলে কলেজগুলো সম্পর্কে প্রাক্তন অথবা বর্তমান ছাত্রদের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারে।

জাতীয় পত্রিকাসহ ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে অবগত হতে পারে। অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য। শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কলেজ সিলেকশন করার আগে প্রতিটি কলেজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে–বুঝে নির্বাচন করবে। এবার যারা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো করেছে, তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং তারা যেন তাদের কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে, এই কামনা করি।

লেখক: মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়