ফিল্ড ভিজিটে একদিন
পুস্তক থেকে অর্জিত জ্ঞানকে মাঠপর্যায়ের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংযোগের অংশ হিসেবে মাঠ পরিদর্শন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ। গত শনিবার (২৭ আগস্ট) তেমনই এক ফিল্ড ভিজিটে অংশ নেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
ফিল্ড ভিজিট হিসেবে কোথায় যাওয়া হবে, ড্রেস কোড কেমন হবে, কী কী পড়তে হবে, সঙ্গে কী কী নিতে হবে এবং প্রাসঙ্গিক বেশ কিছু বিষয় জানিয়ে দেওয়া হয় ক্লাসেই।
হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ যাত্রা শুরু করে ২০১৯ সালে ৩৯ শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক নিয়ে। গত বছর বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমবার ফিল্ড ভিজিটে যায় বিভাগটি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। লেভেল-২, প্রথম সেমিস্টারের ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ কোর্সের অংশ হিসেবে এ ফিল্ড ভিজিট। ফিল্ড ভিজিটে বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুব চৌধুরী এবং বিভাগের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমেদ সরকার সফরে যুক্ত হন।
করোনার কারণে অফিশিয়ালি বিভাগের কারও কোথাও ট্যুর বা বনভোজনে যাওয়া হয়নি। এবারই প্রথম বিভাগের সবাই একসঙ্গে কোথাও যাওয়া, তা-ও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে! তাই ফিল্ড ভিজিট এক প্রকার ঘুরতে যাওয়ার বাতাস পেয়ে বসে। নির্দেশনা মোতাবেক সকাল ৭টা ৫০ মিনিট থেকে ক্যম্পাসে উপস্থিত হতে শুরু করেন সবাই। সবাইকে নিয়ে বাস ছাড়ে ৮টা ২০ মিনিটে। ভুটান থেকে আসা একজন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভাগের মোট ৫২ জন শিক্ষার্থী এ ফিল্ড ভিজিটে অংশ নেন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে রংপুর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার, দর্শনা ও রংপুরে পৌঁছে যায় গাড়ি। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল। ফুল দিয়ে বরণ, শুভেচ্ছা বক্তব্য, ক্রেস্ট প্রদান, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প সম্পর্কে জানাতে স্লাইড প্রদর্শন—এসবের মধ্যেই আকাশটা অন্ধকার হয়ে আসে। দুপুরের পর থেকে ঝোড়ো বৃষ্টিতে বারবার শিডিউল বিপর্যয় হয় ফিল্ড ওয়ার্কের মধ্যে।
এ ভিজিটে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে পড়ানো জেন্ডারের সঙ্গে ডেভেলপমেন্টের যে ওতপ্রোত সম্পর্ক, তা আরও একবার অনুধাবন করেন স্বচক্ষে। সমাজের বড় একটি অংশ নারী। এখনো সমাজে তাঁরা অবহেলিত ও বঞ্চিত সবকিছু থেকে। সামান্য সহযোগিতা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে নারীরা শামিল হতে পারবেন সমাজের মূলধারায়। ফিল্ড ওয়ার্কে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে একটি বিষয় দেখে বড় হয়েছি যে আমার বেসিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, স্কুলে যাওয়ার বই-খাতা, ড্রেস সব পরিবারের সদস্য মা-বাবা বা ভাই এনে দিলেও পরিবেশের সঙ্গে মিশতে বা যখন পরিবার আমার সঙ্গে থাকবে না সেই পরিবেশে নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রাখব, বিষয়টি তেমন প্রাধান্য পায়নি। আমার কোনো প্রশিক্ষণ বা স্কিল নেই এমন পরিবেশে পড়ে গেলে কী করতে হবে। কিন্তু প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নারীদের আত্মরক্ষার্থে কারাতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে একেবারে স্কুল লেভেল থেকেই, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বিকেলে ঝড় কিছুটা কমলে মনিরামপুর বড়খোলা উচ্চবিদ্যালয়ে যান ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় হয় সেখানে। বিদ্যালয়ে একটি কর্নার আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের তরুণ ও বয়ঃসন্ধিকালের নানা পরিবর্তন ও রোগ বিষয়ে সচেতন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা বেশ স্বাস্থ্যসচেতনও বটে। স্কুলের এক পাশে বাগান করেছে নিজেরা। এটি তাদের জন্য অপ্রতুল কি না, এমন প্রশ্নে তারা বলে, ‘আমাদের বাড়িতে পতিত জায়গায় ও উঠানে বাগান করেছি সবাই। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি পরিবারের সদস্যরা মিলে খাই।’
সারা দিনে বিভিন্ন জায়গা ঘোরা এবং প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া শেষ। এবারে ফেরার পালা।
প্রতিষ্ঠানটির এবং বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যের সঙ্গে আলাদা পরিচয়পর্ব ও ফটোসেশন শেষ করে গাড়িতে উঠি। এভাবেই শেষ হয় বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের আনন্দঘন ও শিক্ষণীয় প্রথম ফিল্ড ভিজিটের। এখানে না এলে হয়তো বিষয়গুলো বই-পুস্তকে পড়েই মুখস্থ রাখতে হতো শিক্ষার্থীদের। আজ স্বচক্ষে দেখলেন সবাই। এমন ফিল্ড ভিজিট সামাজিক বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি কোর্সেই থাকা উচিত। পরিবর্তনশীল এ বিশ্বের গতিশীল সব বস্তু। ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে বেকার ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর অভিশাপ ঘোচানো সম্ভব। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেশনালসদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এমন আন্তসম্পর্ক ও মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি।
*লেখক: মো. তানভির আহমেদ, শিক্ষার্থী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।