জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও সমসাময়িক রাজনীতি এবং নির্বাচন

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশার ওপর উঠে স্লোগান দুই তরুণীরফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিপ্লব বা রেভল্যুশন শব্দটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘রেভল্যুশিও’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা কি আসলেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি? না ঘুরপাক খেয়ে আগের অবস্থানেই রয়ে গেছি! এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকার ভাষায়, সাধারণভাবে বিপ্লব হচ্ছে বিক্ষুব্ধ জনগণের একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও সামষ্টিক আন্দোলন, যেখানে শক্তি কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিদ্যমান ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। জ্যাক গোল্ডস্টোন তাঁর ‘রেভল্যুশন’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ১০-২৫) বিপ্লবের কারণগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের অপশাসন, বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার, অনাচার, অধিকারহরণ, বিচারহীনতা ও নিষ্পেষণ থেকে পুঞ্জীভূত হতাশা, ক্ষোভ ও দ্রোহকে স্ট্রাকচারাল বা দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্ট্রাকচারাল কারণে ধীরে ধীরে সমাজের মৌলিক কাঠামোর ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসকে নষ্ট করে। স্ট্রাকচারাল কারণগুলো পরিণত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনগণকে চূড়ান্ত আঘাতের জন্য প্রজ্বলিত করার ঘটনা বা কারণগুলোকে তিনি ট্রানজিয়েন্ট রিজন বা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাসে দেখা যায় প্রায়, প্রতিটি বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্বই শুরু বা প্রজ্বলিত হয়েছে কোনো না কোনো বিশেষ ঘটনার ভেতর দিয়ে। ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন শুরু হয়েছিল প্রিন্সেস আনা মারির ‘জনগণ রুটি না পেলে কেক খাক’ এই উক্তি থেকে। ডা. মিলন হত্যায় প্রজ্বলিত নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান। জুলাইয়ের গণবিস্ফোরণও গতি পেয়েছিল আবু সাইদের বুক চিতিয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনা থেকে।

সে বিচারে গত ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের অন্যায়, অনিয়ম, অত্যাচার, অবিচার এবং তৎসংশ্লিষ্ট  প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও পুঞ্জীভূত দ্রোহ ছিল এ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্ট্রাকচারাল রিজন, আর ছাত্রদের নেতৃত্বে ৩৬ দিনের গণবিস্ফোরণ ছিল ট্রানজিয়েন্ট রিজন। বলা যেতে পারে স্ট্রাকচারাল চেঞ্জ হচ্ছে বিপ্লবের পটভূমি আর ট্রানজিয়েন্ট চেঞ্জ হচ্ছে বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্ব।

ব্যর্থ কিংবা সফল যাই বলা হোক না কেন, জুলাই বিপ্লবের পটভূমি তৈরিতে সুদীর্ঘ ১৭ বছরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপিই ছিল অগ্রদূত। অন্যদিকে প্রায় হাজার তাজা প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ নির্মূলে ছাত্রদের আন্দোলন ও নেতৃত্ব ছিল বিপ্লবের এক অমর মহাকাব্য। যে মহাকাব্যকে আরও বেশি অলংকৃত করেছিল পথে নামা মা, বাবা, অভিভাবক, শ্রমিক, মজুর, রিকশাওয়ালা, সবজি বিক্রেতাসহ আপামর জনগণ। আপাত ব্যর্থ জুলাই বিপ্লবের প্রথম ও অন্যতম কারণ হচ্ছে ছাত্রনেতা কর্তৃক বাকি সবার অবদানকে অস্বীকার করে একমাত্র নিজেদের অর্জন হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। একই সঙ্গে বিপ্লবের পরপরই ’২৪ দিয়ে ’৭১ খাটো করার প্রবণতা, ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান, তাদের অনেক নেতার জামায়াত শিবিরের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠার ইতিহাস ও ‘মেটিকুলাসলি প্ল্যান্ড’ তকমা দ্রুত এই বিপ্লবের পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষকে সন্দিহান করে তোলে।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

লক্ষ্য অর্জনের মাপকাঠিতেও এ অর্জন ছিল আংশিক। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত লক্ষ্য শুধু ফ্যাসিবাদের পতন ছিল না। শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের যুগান্তকারী শাস্তি এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাও ছিল এ বিপ্লবের প্রেরণার উৎস। সফল অভ্যুত্থানের পর জনরোষ ও আক্রোশের ধ্বংসাত্মক সময়টাকে বলা হয় ‘রেইন অব টেরর’। এ পর্বে ধ্বংস ও সহিংসতা অনিবার্য, তবে তা নতুন কিছু  সৃষ্টির প্রসব বেদনা। আশ্চর্যজনকভাবে, জুলাই বিপ্লবের প্রবাহ থেমে গিয়েছিল শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায়।

লেখক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বা নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা যেন স্বস্তি পেয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ায়। কিন্তু জুলাইয়ের দ্রোহের মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল শেখ হাসিনার যুগান্তকারী বিচারের প্রবল আকাঙ্ক্ষা, যা হয়নি আর পরিবর্তন বা রিফর্ম কাগজে–কলমে প্রণীত হলেও বাস্তবায়নের লক্ষণ ও সম্ভাবনা ক্ষীণ। লক্ষ্য অর্জনের মাপকাঠিতে এ অভ্যুত্থান আংশিক সফল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। বিচার বিভাগের সহায়তায় সংবিধানের ১০৬ ধারা সাহায্য নিয়ে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার প্রবল উৎসাহে কাজ শুরু করলেও সরকারের ভেতরে রয়ে গিয়েছিল বিরাট দুটি ক্ষত। একদিকে বিপ্লবী সরকার না হওয়ায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে সরকারের বেশির ভাগ মৌলিক পদ ও প্রতিষ্ঠান যেমন রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের উঁচু পদে থাকা বিগত সরকারের দোসরেরা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার প্রথম পর্ব ছিল অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সমন্বয়কদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া। নতুনত্ব থাকলেও এর অপরিহার্যতা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। সমন্বয়ক থেকে নির্বাচিত উপদেষ্টাদের সঙ্গে ক্ষমতার সংযোগ থাকায় দেশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সমন্বয়ক নামক এক নতুন প্রেসার গ্রুপের আবির্ভাব হলো, যারা প্রচলিত রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির মতোই পদায়ন, পদোন্নতি, টেন্ডার ও বিল বণ্টনের কাজে জড়িয়ে পড়ল। আবার হতাশ হতে শুরু করল মানুষ, যার পরিণাম হলো ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের ভেতর দিয়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া জনগণের বিরাট একটি অংশ এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হলো। রক্ষণশীল সমাজ ছাত্রদের রাজনৈতিক রূপান্তরকে ভালো চোখে দেখল না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আরেক ধাপ ব্যর্থতার চরম পর্বে পৌঁছাল যখন জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে উদ্ভূত ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ও তার নেতারা নিজেই অভ্যুত্থানের আদর্শ বা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হলো। জনগণ দেখল, যে ব্যবস্থা নির্মূলের স্বপ্ন দেখিয়ে ছাত্ররা এসেছিল, তারা নিজেরাই সে অব্যবস্থার ধারক হলো। তারা ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতে শুরু করল, যা এ দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রাথমিক কারণ। জনগণ দেখল যেই লাউ সেই কদু। আবেদন হারাল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের।

গণ-অভ্যুত্থান যখন তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে বলে থারমোডরিয়ান ইফেক্ট। শব্দটি ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন থেকে উদ্ভূত। যে পর্বে বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট ভারসাম্যহীনতা পূরণে প্রতিদ্বন্দ্বী সত্তাগুলো নিজেদের স্থান ও অবস্থান শক্তিশালী করার দ্বন্দ্বে মেতে ওঠে। বাংলাদেশে এখন সেই পর্বটি চলছে এবং তা চলবে নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত।

প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পুরোনো। যারা ভাবেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি শেষ, তাঁদের ৪০০ বছর আগে সানজুর সেই কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই। ‘দেয়ার ইজ নো গ্রেটার ডেঞ্জার দ্যান আন্ডারস্টিমেটিং ইউর অপোনেন্ট।’ একাত্তরের পর মাত্র ১০ থেকে ১৫ বছরেই জামায়াত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থান অত নাজুক নয়। দেশের মোট রিজার্ভের চেয়েও বেশি অর্থ এখনো তাদের কাছে। নেতৃত্বের বিরাট একটি অংশ ভারতে, যাঁরা তাদের প্রতিষ্ঠিত বন্ধু। সামরিক বেসামরিক ও সব ক্ষেত্রে এখনো ৮০ শতাংশ লোক তাদের। উচ্চপর্যায়ে আরও বেশি। তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশের ১২টা বাজিয়েও ক্ষমতায় থাকার ফ্যাসিবাদী ধারণা দেখিয়েছে গত ১৭ বছর। এবারও ব্যতিক্রম কিছু হবে না। কারণ, নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যুর ধাপ শুরু হবে এবং আগামী পাঁচ বছরে তা ত্বরান্বিত হবে। সে হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ’৭১–কে তারা রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে নির্বাচন বানচালের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসী সরকার আর ছাত্রলীগকে দিয়ে মুক্তিবাহিনীর মতো দেশের ভেতর পাঠিয়ে দেওয়ার কৌশল হাসিনা অবলম্বন করবেনই। নির্বাচনের আগেই করতে পারেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যও করতে পারেন। নির্বাচনের পরে তো করবেনই। সঙ্গে রয়েছে তাদের প্রচলিত দেশি–বিদেশি চক্রান্ত।

রাজনৈতিক ও বৈধ নির্বাচনীপ্রক্রিয়ায় জামায়াতের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ বাস্তবতা থেকেই বিগত সময়ে তারা কখনো আওয়ামী লীগ আবার কখনো বিএনপিকে আঁকড়ে ধরেছে। তবে এবার তাদের পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ মাঠের বাইরে এবং তাদের সহযোগী জাতীয় পার্টি কোণঠাসা অবস্থায় থাকায় জামায়াত নিজেদের শুধু দ্বিতীয় বৃহত্তম দলই ভাবছে না, বরং ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে। তবে তাদের পুরোনো ‘মাস স্ট্র্যাটেজি’–তেই যা ইনসারজেন্সি বা বিপ্লবের  ‘রাইট স্ট্র্যাটেজির কাছকাছি কিন্তু কাস্ত্রো কিংবা চে গুয়েভারার লেফট স্ট্র্যাটেজির বিপরীত। মাস স্ট্র্যাটেজি দীর্ঘকাল মেয়াদে সরকারের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে গোপনে নিজেদের সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে সিক্রেট এক প্যারালাল সরকার গঠন করে। জামায়াত এ ব্যাপারে অনেকাংশেই সফল। অন্যদিকে জামায়াতের আর্থিক অপরাধ না থাকলেও নৈতিক অপরাধ চরম। নারীর সম্ভ্রমহানির পরও তারা ’৭১–এ পাকিস্তান সমর্থন করেছে, ক্ষমতার লোভে একবার আওয়ামী লীগ আরেকবার বিএনপি এবং বর্তমানে আবার গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছে। তাদের ছোট করে ভাবার অবকাশ নেই। তার চেয়েও বড় নিয়ামক হচ্ছে আজকের জামায়াতের নেতৃত্বে ’৭১–এর কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই এবং বর্তমান জেন–জি ’৭১, মুজিব, জিয়া কিংবা রাজাকার কাউকেই দেখেনি বা আমাদের মতো শৈশব থেকেই তাদের গল্প শুনে বড় হয়নি। কাজেই রাজাকার ’৭১–এ কী করেছে, এটা তাদের কাছে সুদূর অতীতের গল্প।

জাতীয় পার্টি ফেঁসে গেছে  বিগত সময়ে আওয়ামী দোসর হওয়ার কারণে। নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী পথ অনুসরণ করে তাদেরও জামায়াতের সঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়।

এনসিপি নতুন দল হলেও ফ্যাসিবাদ অবসানের কৃতিত্বের দাবিদার। সে হিসেবে জনগণের একটা অংশের সহানুভূতি তাদের প্রতি এখনো আছে।

বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একমাত্র ও সবচেয়ে শক্তিশালী দল বিএনপি। রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সে আসতে চাইবেই। সে হিসেবে নির্বাচন চাওয়া তাদের জন্য ভুল কিছু নয় এবং তারা ক্ষমতায় আসবে বলেই বেশির ভাগ জনগণ আশাবাদী। তবে গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বিএনপি কিছু বাস্তবতার মধ্য দিয়ে গেছে। দলের প্রধানসহ নেতৃত্বের বিরাট একটি অংশ নির্বাসন, জেল, জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় দলের ভেতরে জাতীয়তাবাদের আদর্শের বিকাশ, লালন ও চর্চা ব্যাহত হয়েছে। সুদীর্ঘ ১৭ বছরের হতাশা আর বঞ্চনার সময় কর্মীদের সামনে একমাত্র উদাহরণ ছিল আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দৌরাত্ম্য। পরবর্তী অস্থির সময়ে পুলিশ ও প্রশাসন ছিল ভঙ্গুর ও ভীত। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়েও কোনো অজ্ঞাত কারণে সেনাবাহিনী ছিল নিষ্ক্রিয়। বিএনপির আদর্শ বিচ্যুত কিছু অংশ এ সময়ে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী দুর্বৃত্ত দল কর্তৃক দখলকৃত তাদের সম্পত্তি, স্থাপনা ও ব্যবসা পুনরুদ্ধারে। এ প্রক্রিয়ায় অবশ্য তাদের কিছু অংশ জড়িয়ে পড়ে চাঁদাবাজিতেও। জুলাইয়ে গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী অবস্থায় রাজনৈতিক মতাদর্শ ছাড়াই সব সমাজবিরোধী অংশই সুযোগ নেয় অস্থিরতার। বিএনপির সম্ভাব্য ক্ষমতায় আগমনকে পরিকল্পিতভাবে চিত্রিত করা হয় আওয়ামী দুঃশাসনের পুনরাগমন হিসেবে। ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনের ফলাফল তার প্রমাণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়; কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের ১০০ শতাংশ ভোটারই জেন–জি নয়। যে কারণে তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে বিএনপি এই সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে জনগণ আশাবাদী। ব্যাপারটি খুব কঠিনও নয় তাদের জন্য। শুধু ৫০ থেকে ১০০টি দুর্নীতিবাজ ও রাজনৈতিক সিন্ডিকেটেড মাস্তানের দোরাত্ম্যে প্রভাবশালী নেতা সাজা ৫০ থেকে ১০০ জনকে বাদ দিয়ে নতুন, স্বচ্ছ ইমেজ, ত্যাগী,  শিক্ষিত ও বিশেষভাবে জনগণের জন্য কাজ করা নেতাদের নমিনেশন দিতে হবে। জনগণ তখনই বিশ্বাস করবে বিএনপি যে পরিবর্তনের কথা বলছে, তা শুধু পুরোনো রাজনৈতিক কথা নয়, তাদের কাজেও তার প্রতিফলন আছে। আর জণনগণই সব ক্ষমতার উৎস।

  • লেখক: কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মো. জগলুল আহসান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদ