ভেড়ামারা ব্রিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ, নজরে রাখতে হবে কিছু বিষয়

নদীর প্রবাহিত পানির মনোরম শব্দ আমাদের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে। নদীর জল প্রবাহিত হওয়ার শব্দ, পাখির ডাক এবং গাছের পাতায় বাতাসের শব্দ আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এসব শব্দ আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে সহায়তা করে। নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনকে উজ্জীবিত করে। সবুজ গাছপালা, নীল আকাশ আমাদের মনকে উজ্জীবিত করে। এই সৌন্দর্য আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং আমাদের মনকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে।

জেলা শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খোলাহাটি ইউনিয়নে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভেড়ামারা রেলসেতু। পাহাড়ের মতো উঁচু ব্রিজের নিচে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর। তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে স্বচ্ছ শীতল জলরাশি। দীর্ঘদিন পর পাথরগুলো বেরিয়ে এসেছে পানির স্রোতোধারা ও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে।

তাই তো তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে একটু প্রশান্তির আশায় ভেড়ামারা ব্রিজটির ছবি স্থানীয় মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। তখন থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণ শুরু হয়। এর আগে কখনোই এমন পদচারণ সেখানে দেখা যায়নি। কিছুসংখ্যক মানুষকে বিকেলবেলায় ঘুরতে দেখা যেত। নদীতে মাছ ধরা হতো।

ভেড়ামারা ব্রিজ এলাকার যুবকদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৭০ ফিট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। যাতায়াতের জন্য অনেক সমস্যা হতো সেই অঞ্চলের মানুষদের জন্য। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ উপজেলা-ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ঘাঘট নদীতে এ ব্রিজ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি। এরপর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের ভেড়ামারায় নবনির্মিত সড়কসেতু যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন তিনি।

সেতু দুটিকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় এখানে ছোট-বড় আকারের পাথর নদীতে ফেলে রাখা হয়েছে। বর্তমানে নদীর পানি কম থাকায় পাথরগুলো দৃশ্যমান হয়ে নান্দনিক এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এলাকাটি এখন মানুষের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় লোকজন এ জায়গার বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। আমরা বর্তমান প্রজন্ম ভেড়ামারা ব্রিজের নামকরণের ইতিহাস জানি না। এই জায়গার নাম বিকৃতি হোক, সেটাও আমরা চাই না।

এখানে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে একটু প্রশান্তির আশায় ছুটছে শিশু-কিশোর আর যুবকসহ সব বয়সী মানুষ। সেখানে স্বচ্ছ-শীতল পানিতে ভিজে-সাঁতার কেটে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন তাঁরা। পানিতে নেমে ছবি ও সেলফি তুলছেন। কেউবা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করছেন।

গাইবান্ধায় বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে, তবে সেগুলো সংরক্ষণ না নেওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই জেলায় দর্শনীয় স্থান ও বিনোদনের জন্য পার্ক তৈরি করা খুবই জরুরি। বর্তমান প্রজন্ম মানসিকভাবে অসুস্থ। তারা কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। তাদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি বলে মনে করি। বর্তমান সময়ে তরুণ ও যুবকেরা প্রায়ই তাদের প্রিয় মানুষ ও পরিবারের সঙ্গে ব্রিজে বেড়াতে যান। এখানে কয়েকটি বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনাদের একেকজনের একেক রকম মন্তব্য থাকতে পারে।

১. শহর থেকে একটু দূরে কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে স্বস্তিতে থাকা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।

২. জায়গাটি বিনোদনের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিন্তু পানি যখন বাড়বে তখন নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

৩. নিজের সাময়িক আনন্দ ও বিনোদনের জন্য আমরা সুন্দর একটি পরিবেশ নষ্ট করছি, সেখানে পলিথিনজাতীয় প্যাকেট পানিতে ফেলছি।

৪. দীর্ঘদিন পাথরগুলো পানিতে থাকায় অধিকাংশ জায়গায় শেওলা জমে গিয়েছে।

৫. পাথরগুলো বিভিন্ন আকৃতির হওয়ায় চলাচলের জন্য বিপজ্জনক, যেকোনো সময় পা পিছলে যেতে পারে।

৬. বর্তমানে স্কুলের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এখানে ঘুরতে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

৭. ব্রিজের পাশের অংশে গভীরতা অনেক বেশি। অনেকেই সাঁতার না-জানা সত্ত্বেও সেখানে যাচ্ছেন। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৮. লক্ষ করা যায়, আমাদের বোনেরাও সেখানে যাচ্ছেন। পানিতে নামছেন সেখানে ব্রিজের ওপর থেকে কিছু ছেলেকে ছবি ও ভিডিও করতে দেখা যায়। এতে আমার বোনেরা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

৯. সেখানে বিভিন্ন রকমের ধূমপানজাতীয় দ্রব্যাদির প্যাকেট খেয়াল করা যায়।

১০. ছোট শিশুদেরও দেখা যায়। শিশুদের পানিবাহিত রোগ বা পায়ে পাথর পরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১১. মানুষের পদচারণে নদীর গভীর জলের দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হতে পারে।

১২. ভেড়ামারা ব্রিজটিতে কিছু শ্রমিককে মেরামত করতে দেখা যায়। তারা ভারী সরঞ্জাম দিয়ে কাজ করছেন, যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভারী সরঞ্জাম নিচে পরতে পারে।

লেখক: মো. মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী, গাইবান্ধা সরকারি কলেজে

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]