ফার্মা আমাদের প্রথম নাকি সেকেন্ড চয়েজ!

একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করে ওষুধ বিক্রি করেনছবি: সংগৃহীত

করোনার সেই সময় কি ভুলে গেলাম! নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ-মাস্কে বাজার সয়লাব। ভুয়া করোনা ও সার্টিফিকেট রিপোর্ট দিয়ে সে সময় অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। একদিকে কারও অর্থ আয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে গেল, আবার অনেকের পোয়া বারো। একদিকে ডাক্তার ও প্রশাসনের লোকজন জীবন বাজি রেখে আমাদের সেবা দিচ্ছিলেন, অন্যদিকে আমরা বাইরে ঘুরে ঘুরে লকডাউনের জন্য চিৎকার করে যাচ্ছিলাম। একদিকে ওষুধ কোম্পানির করোনাযোদ্ধারা দিন–রাত কাজ করে ওষুধের চাহিদা মেটালেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ওষুধ ও করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ালেন। কিন্তু ওষুধের সংকট একদম হয়নি। জানি কি সেই পেছনের গল্প? নাকি ওষুধের দাম  একটু বাড়লেই আলু-পেঁয়াজের মতো সিন্ডিকেটের কথা মাথায় চলে আসে? করোনা শিখিয়েছে বটে!

জাতির সব ক্রান্তিকালে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, ব্যাংকার, সাংবাদিক, ওষুধ-খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত উৎপাদন-বিপণন কর্মকর্তারা। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট-মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কেমিস্টসহ অনেক নিবেদিতপ্রাণ। ওষুধশিল্পসহ ফুড-বেভারেজ প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট-কেমিস্টদের সঙ্গে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা গুণগত মান নির্ণয় ও নিশ্চিতকরণে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

এমন কোনো শিক্ষার্থী গ্রুপ পাওয়া খুব দায়, যারা কিনা সরকারি চাকরি পেতে চায় না। সবাই চায় একটি স্থায়ী চাকরির সুবাদে জনগণের সেবা করতে। সেটা খুব স্বাভাবিক এবং এটাই হয়তো হওয়া উচিত। কিন্তু সরকারি চাকরির সংখ্যা তুলনায় কম হওয়ায় সবার চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই হয়তো সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণ বলা হয়ে থাকে। সে যা–ই হোক না কেন, তাহলে বাকিরা কোথায় যাবে? বিশেষ করে যারা বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু বিষয়ে (যেমন ফার্মাসিস্ট-মাইক্রোবায়োলজিস্ট–বায়োকেমিস্ট-কেমিস্ট ইত্যাদি) অনেক পরিশ্রম করে অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করছে! তাহলে তাদের সেকেন্ড চয়েজ কি ফার্মাসিউটিক্যালস?

দেশের যেখানে ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে, সেখানে কেন সেকেন্ড চয়েজ ফার্মাসিউটিক্যালস, সেটা না হয় গবেষণা না–ই করলাম। তবে এখন পর্যন্ত যাঁরা ফার্মা লিডার তাঁদের অনেকেরই কিন্তু ফার্স্ট চয়েজ ছিল ফার্মাসিউটিক্যালস। নইলে কীভাবে রপ্তানির বেশির ভাগ ওষুধ আর কেনই–বা ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাবেন বাংলাদেশের অগণিত ফার্মাসিস্ট-মাইক্রোবায়োলজিস্ট–বায়োকেমিস্ট-কেমিস্ট।

সম্ভাবনার অসীম দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। এ অবস্থায় লিডার তৈরি করা একদম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। মনের জোরে হয়তো কোনোমতে চাকরি করা যায়, কিন্তু মনোনিবেশ না থাকলে একজন আরঅ্যান্ডডি ফার্মাসিস্ট ঠিকঠাক নতুন প্রোডাক্টের ফর্মুলেশন করবেন কীভাবে, আরঅ্যান্ডডি কেমিস্ট সঠিকভাবে সেই ফর্মুলেশনের গুণাগুণ নির্ণয় করবেন কীভাবে, একজন প্রোডাকশন ফার্মাসিস্ট ভালো প্রোডাক্ট বানাবেন কীভাবে, একজন কিউএ ফার্মাসিস্ট ওষুধের মান যাচাই করবেন কীভাবে আর কীভাবেই–বা কিউসি ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট অথবা একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করবেন?

কাজেই এখনই সময় সরকারি–বেসরকারিভাবে এসব বিষয় নিয়ে ভাবার। আমাদের দক্ষ ফার্মা লিডার দ্বারা সুনিবিড়ভাবে গড়ে ওঠা এই ওষুধশিল্পের মান অক্ষুণ্ন রাখতেই হবে। এ জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

পরিশেষে সরকারি-বেসরকারিভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ফার্মা সেক্টরে অণুজীববিজ্ঞানীদের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য দরকার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ আর মনোবল।

লেখক: মনোজিৎ কুমার রায়, মাইক্রোবায়োলজিস্ট