বৃষ্টি, পার্ক স্ট্রিট ও পদ্মা সেতু
দেশভাগের আগে আমাদের মহেশপুর উপজেলা বনগাঁ মহকুমা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশভাগের পর এটি বৃহত্তর যশোর জেলার মধ্যে চলে আসে। গ্রামের বয়স্ক মানুষের কাছে শুনেছি, তাঁরা নিয়মিত ঘোড়ার গাড়িতে বনগাঁ যেতেন। এখন তারকাঁটা দুই দেশকে পৃথক করলেও ভাষা ও সংস্কৃতিতে বেশ মিল রয়েছে দুই বাংলার।
হঠাৎই গত সপ্তাহে কলকাতায় যাই। প্রায় প্রতিদিন এখানে কোনো না কোনো সময় বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে পার্ক স্ট্রিটে মানি এক্সচেঞ্জের কাজ শেষে রাস্তায় আসতেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। একটা স্টেশনারি দোকানে দাঁড়িয়ে কলকাতার বৃষ্টি উপভোগ করতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘দাদা, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?’ আমি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে আমার সঙ্গে গল্প শুরু করলেন। প্রথমেই বললেন পদ্মা সেতুর কথা। সরকারের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল ভারতবর্ষে প্রথম কলকাতাতে চালু হয়। এখন নদীর নিচ থেকে মেট্রো চালুর কথা চিন্তা করছে রাজ্য সরকার। বাংলাদেশে মেট্রো চালু হলে শহরের মানুষ অনেক সুবিধা পাবে। কলকাতার মানুষ স্বল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে জানিয়ে পাশের মেট্রোস্টেশন দেখিয়ে আমাকে ট্রেনে চেপে কলেজ স্ট্রিটে বিখ্যাত কফি হাউস ঘুরে আসতে বললেন। কলকাতা শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পার্ক স্ট্রিটে বৃষ্টি দেখা এবং প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে ভিনদেশির সঙ্গে গল্প জমে উঠেছিল। বিদেশের মাটিতে দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শুনে গর্ববোধ করছিলাম।
পদ্মা বহুমুখী সেতু রাজধানী ঢাকা শহরের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুটি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ও শিল্পের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে; যার মাধ্যমে তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। সেতু দেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করবে, ফলে যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা, বাগেরহাটের মোংলা এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনার স্থলবন্দরের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে, যা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে বৃহত্তর যশোর ও খুলনা অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সময়ে ঢাকাতে যাতায়াত করতে পারবে। কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে, এমনকি এই রেলপথ ব্যবহার করে কলকাতা থেকে স্বল্প সময়ে আগরতলা যাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সেতু বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। তবে বিরোধী দল শুরু থেকেই সেতু নির্মাণে দুর্নীতির কথা বলছে।
স্বাধীনতার ৫১ বছরে বেশ কিছু অর্জন বিশ্বের দরবারে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। খবরের কাগজে নিয়মিত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কথা প্রকাশিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিদেশে অর্থ পাচার উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। মেট্রোরেলে চেপে কলেজ স্ট্রিটে যাওয়ার পথে ভাবছিলাম, বিদেশের মানুষ আমাদের দেশের উন্নয়ন নিয়ে ওয়াকিবহাল। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, গণতন্ত্রের বিকাশে টেকসই ও সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা, শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নসহ মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে নজর দিতে হবে। তবেই অচিরেই আমরা সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ পাব।
লেখক: মো. শাহিন রেজা, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।