বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন স্বপ্ন ও বাস্তবতা
বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সুনাগরিক তৈরির আঁতুড়ঘর। বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি সামনে এলেই মনে পড়ে গবেষণা আর নানামুখী শিক্ষার একটি কেন্দ্রভূমিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ক্যানভাসে কতগুলো স্বপ্ন আঁকি।
স্বপ্নের চিঠির খামে
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানুষকে নৈতিক-মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এখানে রয়েছে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সমাজকে আলোকিত করবে। এখানে পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে বাস্তবে প্রয়োগিক শিক্ষা হবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষকরা হবেন আন্তরিক, ক্লাসরুমে থাকবে আধুনিক সব ব্যবস্থার সমাহার। থাকবে একটি রোডম্যাপ, যেখানে শিক্ষার্থীরা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন।
বাস্তবতার করিডরে দাঁড়িয়ে আমরা দেখি:
আমাদের দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় পড়াশোনা ও গবেষণার মান খুবই নড়বড়ে। বলা হয়ে থাকে, ‘সুস্থতাই সব সুখের মূল’। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলের খাবারের বাস্তব প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় নেই পুষ্টির সুষম বণ্টন; এতে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নও ঠিকভাবে হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও যোগ্য শিক্ষকদের নেওয়া হচ্ছে না ফলে শিক্ষার্থীরা গুণগত মানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্লাসরুমে পর্যাপ্ত আলো নেই, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস করালেও কনটেন্টগুলো সাদা পর্দায় ঝাপসা দেখায়। পর্যাপ্ত সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় সবাই শিক্ষকদের কথা শুনতেও পান না। সিট মুখস্থ করে যেনতেন পাস করে বেড়িয়ে আবার নতুন করে ধরতে হয় চাকরি প্রস্তুতির সিট। অথচ কারিগরি ও প্রয়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে করা যেত জনশক্তি। কিন্তু বাস্তব চিত্র হতাশার! বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ করেও অনেক শিক্ষার্থীকে বেকার ঘুরতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢেলে সাজালে এমন অবস্থা হতো কি?
জ্ঞানের সর্বোচ্চ পীঠস্থান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতার অগ্রগতির ধারক ও বাহক হিসাবে চলে এসেছে। কাজেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন এবং বাস্তবতার সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করিয়ে দিতে হবে।
*লেখক: সুমাইয়া আক্তার, শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়