সফল উদ্যোক্তা তৈরির দায়িত্ব কার

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিবিএ এমবিএ শেষ করে কিছুদিন কোম্পানির চাকরি করেছি। এরপরে বুঝতে পারলাম, কোম্পানির মালিক আসলে ব্যবসা করেন। এ থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের আগ্রহ নিজের মধ্যে জন্ম নেয়, নিজে প্রতিষ্ঠান করলে দেশের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যাবে, নিজের ও দেশের উন্নতি হবে, এই রকম মহৎ কিছু উদ্দেশ্য নিয়েই, একটি বড় প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তাভাবনা করি।

কী করা যায় ভাবতে ভাবতে মনে হলো অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু করতে তো নগদ টাকা লাগে, আমার তো নগদ টাকা নেই। বিষয়টা নিজের পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করার পরে, অনেকেই আমার মতামতের বিপক্ষে চলে গেলেন। শেষমেশ ছেলে হিসেবে বাবার কাছে বিশেষ অনুরোধ করার পরে, বাবা বললেন নগদ টাকা তাঁর কাছেও নেই, তবে তিনি প্রায় ছয় বিঘা কৃষিজমি ব্যবহার করার অনুমিত দিলেন। কী করা যায়? ভালো একজন ট্রেইনার আর এইচ খান স্যারের সঙ্গে কোম্পানির চাকরির সুবাদে পরিচয় ছিল, তাঁর পরামর্শ নিয়ে ঘাস লাগিয়ে গরুর খামারের কাজ শুরু করলাম।
ছোট খামার আর চাকরি একসঙ্গে চলল না। তাই বুকে স্বপ্ন নিয়ে চাকরিটাই ছেড়ে দিলাম। অনেক ঘাত–প্রতিঘাত মোকাবিলা করে ১০ বছরে আমার খামারে ৭০–৮০টি গরুর অবস্থান ও ৮–১০ জন লোকের কর্মসংস্থান হলো। এর সঙ্গে আছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও বেসরকারি ব্যাংক ডাচ্‌–বাংলার ঋণ।
নিচের বাধাগুলো টপকানো খুবই কঠিন ছিল—
* ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া
* ঋণ নিলেই প্রতি মাসে মূলধন কমতে থাকে
* একটু বড় ঋণ নিতে চাইলে জামানত বা মর্টগেজ দিতে হয়, একজন ছাত্রের পড়াশোনা শেষ করে কী থাকে তার হাতে?

যাহোক, সেসব বাধা পেরিয়ে আমার অবস্থা এখন সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো, এ যেন আরও ভয়ানক জায়গা, যেখানে বলা যায় না, সহ্যও করা যায় না। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা আর ১০ বছরের পরিশ্রম মিলিয়ে ৫০০টি গরু লালনপালন করতে প্রায় সব দিক থেকেই সক্ষম আমি শুধু মূলধন ছাড়া। পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে ব্যবসা আরও দ্রুত করতে পারতাম।

প্রায় প্রতিটি সরকারি ব্যাংক ঋণ দেবে জমির মৌজা রেটের ৫০ শতাংশ, আর বেসরকারি ব্যাংক দেবে বাজারদরের ৫০ বা ৬০ শতাংশ, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য যোগ্যতা যা–ই থাকুক না কেন, ঋণ জামানতের বিপরীতেই হবে।
আগেই বলেছি একজন উদ্যোক্তার কী থাকে
* প্রতি ২০টি গরুর জন্য একজন লোকের কর্মসংস্থান হবে
* মাংস ও প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়বে
* দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে
* বেকারের হার কমবে
* জমি ১২ মাস ব্যবহার হবে
* কৃষি এগিয়ে যাবে
* দেশ এগিয়ে যাবে

কিন্তু একজন উদ্যোক্তা এগুলো মনেপ্রাণে চাইলেও বাস্তবায়ন করতে পারবেন না শুধু টাকার অভাবে, অথচ আমার মতো ব্যক্তিরাই বেতনভুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, চাকরি করলে পুঁজি লাগে না, কিন্তু ব্যবসা করলে পুঁজি লাগবেই। সঠিকভাবে জানা নেই সরকারের নীতিমালাতে কী আছে, তবে যাঁদের দায়িত্ব উদ্যোক্তা তৈরি করা, তারা কি ভালোভাবে করতে পারছেন তাঁদের কাজ?

আমাদের মতো বা আমাদের চেয়ে মেধাবী উদ্যোক্তার আর্থিক কষ্ট কে দেখবে? একা আর কত দূর? এখন শুধু প্রয়োজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা, তাই তো করতে পারতাম দেশের জন্য সেই কাজ, যা করার স্বপ্ন দেখি।


*লেখক: মশিউর রহমান, করিলাবাড়ি, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ