বস্ত্র প্রকৌশলীদের প্রাণের দাবি: বিসিএসে বস্ত্র ক্যাডার চালু

তৈরি পোশাক খাতকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেকার সমস্যার সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে নারীর কর্মসংস্থানে রয়েছে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে অবদান রাখার পাশাপাশি এ শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং ইত্যাদি শিল্পেরও সম্প্রসারণ ঘটেছে। সব মিলিয়ে বলা চলে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি পোশাকশিল্প।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট পণ্য রপ্তানি করেছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের। যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিই ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের। অর্থাৎ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ৮৪ শতাংশ শুধু বস্ত্র খাত থেকেই এসেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বস্ত্র প্রকৌশলী তৈরির আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বুটেক্স অধিভুক্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ প্রায় ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় (বেসরকারিসহ) থেকে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী বস্ত্র প্রকৌশল বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বের হওয়া বস্ত্র প্রকৌশলীরা এ খাতের উন্নয়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো টেক্সটাইল প্রকৌশলী না থাকায় সব সরকারি সুবিধা থেকে এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। টেক্সটাইল সেক্টরের উন্নয়নের জন্য যে বিজনেস পলিসি দরকার, টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে ফ্যাক্টরির পরিবেশ ও পণ্যের উন্নতি সাধন ছাড়াও নানাবিধ উন্নয়নের জন্য টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েটদের সরকারের উচ্চপর্যায়ে থাকা দরকার।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নানা ক্যাডার থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে যে খাতের অবদান ৮০ শতাংশের বেশি, সেই বস্ত্র খাতের প্রকৌশলীদের জন্য কোনো ক্যাডার নেই। নেই কোনো সঠিক নীতিনির্ধারক। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিরা বস্ত্র প্রকৌশলী না হওয়ায়, তাঁদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বস্ত্রশিল্পকে বিভিন্ন সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে ভয়াবহভাবে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

টেক্সটাইলের নিজস্ব পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনো টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ দেওয়া হয় না। এ জায়গায় যাঁরা বসে আছেন, অধিকাংশই মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের শিক্ষার্থী। পর্যাপ্ত পদ থাকা সত্ত্বেও এগুলোকে বিসিএসে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। বরং এসব পদে এখনো নন-ক্যাডার পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক যদি একজন বস্ত্র প্রকৌশলী না হন, তাহলে সেখান থেকে ভালো ফলাফল আশা করা অনেকটাই অযৌক্তিক। বর্তমান কাঠামোতে, যেসব জায়গায় যেমন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক-সংক্রান্ত কার্যাবলি রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে বস্ত্র প্রকৌশলীদের ক্যাডার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক ব্যবসা করে থাকে, ওই সব দেশের দূতাবাসে একজন বস্ত্র প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে অনেকটা বিসিএসের (ফরেন অ্যাফেয়ার্স) মতো। এতে করে ব্যবসায়িক নানান জটিলতা দূর হয়ে কূটনৈতিক সম্পর্কের মতো একটা ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং দ্বিপক্ষীয় নেগোশিয়েটর হিসেবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

বস্ত্র প্রকৌশলীদের এ দাবি অনেক দিনের। গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিসের নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন। সংসদে কয়েকবার স্বতন্ত্র টেক্সটাইল ক্যাডার চালুর ব্যাপারে কথা বলেন জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোজাফফর হোসেন। গত ছয় বছরে বুটেক্সসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কয়েকবার মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হাজারো বস্ত্র প্রকৌশলীদের এ দাবি আমলে নিচ্ছেন না কেউ। আমলে নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা পাবলিস সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে বা নিলেও আমরা জানছি না। এর ফলে অনেক মেধাবী বস্ত্র প্রকৌশলী বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন।

সরকার দেশের এই শত শত মেধাবী তরুণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন, উন্নত বাংলাদেশ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবেন। বস্ত্র প্রকৌশলীরা উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে এগিয়ে আসবেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও বেশি অবদান রাখার চেষ্টা করবেন

লেখক: সাজ্জাতুল ইসলাম শামীম, শিক্ষার্থী, বুটেক্স