‘ব্লিডিং হার্ট’

চিঠিঅলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

প্রিয়,

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে বসে ছিলাম। অনেক...ক্ষণ....

তোমার দেখা পেলাম না, তাই একটা ছেলেকে ২০ টাকা সম্মানীর বিনিময়ে তোমার কাছে সেই রক্তাক্ত হৃদয় পাঠালাম।

ভয় পেয়ো না। নিজের প্রতি অবিচার হয়, এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটাইনি। একটু মজা করলামমাত্র। আসলে তোমাকে যে ফুল পাঠিয়েছি, তার নাম ‘ব্লিডিং হার্ট’।

শহরের এক প্রান্তে বিশাল উদ্যানে একা একা ঘুরতে ঘুরতে সুন্দর এই ফুল চোখে পড়েছিল। মনে হলো তোমার জন্য এক থোকা নিয়ে যাই।

আজ ছিল আমার ‘তোমাকে ভাবা দিবস’। তাই সব কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। ভেবে রেখেছিলাম, ঘুরে ঘুরে প্রকৃতি দেখব আর এর মাঝে তোমাকে খুঁজব। তোমার কথা ভাবব। আমি প্রতিদিনই অবশ্য তোমার কথা ভাবি, কিন্তু আজ বিশেষ দিন। আজ সব চাপা পড়ে থাকুক। ‘শুধুই তুমি’, মন এটা ভাবুক।

যা-ই হোক, ব্লিডিং হার্ট নিয়ে কতশত ভাবতে ভাবতে উদ্যানের মহুয়ার বনে চলে গিয়েছি। বুদ্ধদেব গুহর লেখা ‘সুখের কাছে কাছে’ উপন্যাসের কথা মনে পড়ল। মহুয়াবনের চিত্তাকর্ষক বর্ণনা ছিল তাতে। প্রতিটি লাইন পড়ার সময় যেন মহুয়ার সুবাস ঘোর লাগিয়েছিল। বুদ্ধদেব বাবু আরও কিছুর বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা আর ভাবব না। ওটা হয়তো অন্য কোনো সময় ভাবা যাবে, যদি তোমার অনুমতি থাকে।

উদ্যানের দ্বার পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কংক্রিটের এই দূষিত নগরীতে এক আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছি। এখানে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী দেখা যায়। সবুজ ঘাসের চাদরে শুয়ে বিশুদ্ধ হাওয়া খেতে খেতে নানা রকম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ডিঙিনৌকায় জেলের মাছ ধরা, ট্রলারে করে মানুষের দূরদূরান্তে যাতায়াত কিংবা বিকট শব্দে প্রায় ডুবন্ত বাল্কহেডের ছাদে বালুঘাটের শ্রমিকদের গা এলিয়ে গলা ছেড়ে গান গেয়ে নদীর ঢেউ ভেঙে পাড়ি দেওয়া...

ওদিকে আবার বড় বড় গাছ আর ঘাসের আড়ালে কপোত-কপোতীদের লুকোচুরি প্রেম! ওদের প্রেম দেখে উদাস হয়ে গিয়েছিলাম। ক্ষণিকের জন্য নিজেকে একা মনে হয়। মনে হয়, তুমি পাশে থাকলে কী হতো? কাচের গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দেওয়া তোমাকে না জানি কত স্নিগ্ধ লাগত..! যদিও তোমার পছন্দ গোলাপ, তবু আমি বলব, তুলনাটা শিউলি ফুলের সঙ্গেই থাক!

আলো-ছায়ার দিনটায় অদ্ভুত ভালো লাগা মিশেছিল। প্রতি পদক্ষেপে ছিল তোমায় অনুভব করা।

দিন শেষে অগোছালো বেশে ফিরে নিজেকে গুছিয়ে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি, ক্লান্ত নগরীতে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছে।

ঘুম নেই চোখে। আজ মনে হয় বিনিদ্র রজনী কাটবে।

বাড়ছে রাত...সঙ্গে বাড়ছে তোমাকে পাওয়ার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা।

ইচ্ছে করছে এই ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে তোমার কাছে যাই। তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছেরও লাগাম টেনে ধরতে হয়। কারণ, চাইলেই সব সময় সবকিছু পাওয়া যায় না। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটা জানা সত্ত্বেও এই অপেক্ষা অনেক সময় খুব কষ্টকর হয়। তখন এভাবে চিঠি লিখে মন হালকা করি।

তবু হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। দেহের প্লাটিলেটসগুলো বিদ্রোহ করতেই থাকে করতেই থাকে। ধীরে ধীরে একসময় এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। তারপর...

জানালা দিয়ে গনগনে সূর্যের আলো এসে ঘুম ভাঙায়। কোনো একদিন তুমি আমার হবে, এই আশায় আবার নতুন উদ্যমে দিন শুরু করি। হোক না হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, তুমি আমার হবে, এ আমার বিশ্বাস।

ভালো থেকো আমার বৃষ্টিস্নাত শিউলি ফুল...

ইতি
তোমার ‘আমি’