মায়ের আবার দিবস হয় নাকি?

প্রতীকী ছবি

মায়ের আবার দিবস হয় নাকি?

আসলেই কি তাই?

দিবসের কি দরকার নেই?

দরকার অবশ্যই আছে। বছরে একটা দিন এমন সুন্দর টাইমলাইন দেখায় মন্দ কী?
পৃথিবীতে ‘মা’ শব্দটার চেয়ে সুন্দর কোনো শব্দ আবিষ্কার হয়েছে কি না, জানি না।

মা হয়তো পৃথিবীর অনেক কিছুই জানেন না, অনেক কিছুই বুঝতে পারেন না। কিন্তু আপনার প্লেটে কতটুকু ভাত দিতে হবে, তা মা জানেন, আপনিও জানেন না। আপনি যতই নিজের কষ্টকে লুকাতে চাইবেন, পারবেন না। আপনার বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলোও মায়ের চোখে ধরা দেয়। আমাদের ভেতরে-বাইরে অন্তরে অন্তরে সর্বক্ষণ মায়ের বসবাস।

এই নাড়িছেঁড়া ধন বলে মায়েরা। এর ব্যাখ্যা আমি জানতাম না। আমার জন্য আমার মায়ের সব সংগ্রাম আমি নিজ চোখে দেখতে পাইনি। বড় হয়ে দেখেছি, মা রান্না করেন, কাপড় ধুয়ে দেন, সংসারের সব কাজ মা একাই করেন।

গরমে আমরা শোবার ঘরে বসে হাপিত্যেশ করছি, আর সেই দুঃখের কথা কষ্টের কথা বলছি মাকে, যিনি কিনা উত্তপ্ত রান্নাঘরে বসে আমাদের জন্য রান্না করে যাচ্ছেন।
এমন হাজারটা কাজের কথা জানি, কিন্তু আমার জন্য করা মায়ের আসল কষ্টটা আমরা জানি না, দেখি না।

বাসায় ভালো একটা খাবার রান্না হলে মায়ের ক্ষুধা থাকে না। আসলে মা চান, আগে আমাদের ক্ষুধা মিটুক, মনের প্রশান্তি আসুক। তারপর যদি বাকি থাকে, তখন মা খাবেন।
এমন হাজারটা গল্প বলা যায় মাকে নিয়ে। দিন ফুরিয়ে যাবে, তবু গল্প শেষ হবে না।

মায়ের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা—কোনোটার কমতি ছিল না জীবনে। কোনো দিন মুখ ফুটে কোনো কথা বলতেও পারি না। নীরবে কাঁদি, মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠি। ছোটবেলা থেকে বহু মার খেয়েছি, বকা শুনেছি। একটা দিন মুখ উঁচু করে একটা কথা বলতে পারিনি।

কারণ, আমার নিজের সব দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা প্রকাশ করার একমাত্র নিরাপদ জায়গা তো মা-ই।

মায়ের করা আসল কষ্টটা আমি নিজের চোখে দেখিনি। কিন্তু আজ আমার ছেলের বয়স প্রায় এক বছর। এটুকু সময়ে তার মা যা করে ফেলেছে, তা দিয়ে বোঝা যায় যে আজকের আমি গড়ে উঠতে গিয়ে আমার মায়ের কতটা রক্ত পানি হয়েছে।

ছোট একটা বাচ্চা চোখের সামনে এলে সবারই ইচ্ছা করে একটু আদর করি, একটু গালে হাত বোলাই, কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরি।

কিন্তু দীর্ঘকাল রাখতে কেউ চায় না; হঠাৎ বাচ্চা কান্না করবে, দৌড়ে নেমে যেতে চাইবে, প্রস্রাব, পায়খানা করবে। মা হচ্ছেন সেই একমাত্র জায়গা, যার কাছে কোনো ক্লান্তি নেই, কোনো দ্বিধা নেই।

রাতের ঘুম বিসর্জন দেওয়াটা আমি বাবা হয়েও দিতে পারি না। কিন্তু শরীরের শত যন্ত্রণা সয়েও মাকে সজাগ থাকতে হয়।

প্রসবের বেদনাকে পাশে ফেলে রেখে মাকে সন্তান কোলে তুলে নিতে হয় দুধ খাওয়ানোর জন্য।

আমাদের অনেকের আধুনিক জীবনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মায়েদের জায়গাই হয় না সেই আধুনিকতার মধ্যে। আমার গ্রাম্য কিংবা বুড়ি মাকে মানায় না আমাদের বিশাল অট্টালিকায়। মাকে ছুড়ে ফেলে ডাস্টবিনে, কিংবা ফেলে যায় রাস্তায়, বৃদ্ধাশ্রমে।

এত সাধের সন্তানের যে মা নিজের রূপ, নিজের ক্যারিয়ার, নিজের চাকরি সবকিছু বিসর্জন দেয়, সেই মা হয়ে যায় পর।

আমাদের একদিন গোসল করার কথা মা ভুলে যান না; কিন্তু ভুলে নিজের মাথায় শ্যাম্পু দিতে, ভুলে যান চুলে একটু তেল দিতে।

জীবনে হাজারটা ভালো কাজ না করলেও চলবে। শুধু মায়ের মুখের হাসির রসদ জোগান। আপনার পায়ের কাছে কোটি টাকা এনে ফেললেও হয়তো আপনার মন ভরবে না; কিন্তু আপনার সামান্য দুটি কথা আপনার মাকে এক রাজ্যের খুশি এনে দেবে, তা আপনি জানেন না।

জীবনে মায়ের সোহাগ পেয়েছি, পেয়েছি আমার মায়ের ভালোবাসাও। যখন আমার নানি বিদায় নেন পৃথিবী থেকে, তখন অনুভব করেছি, প্রিয়জন হারানোর ব্যথা। মা আমার সবচেয়ে প্রিয়জন, আর মায়ের প্রিয়জন তাঁর মা। আজও বুকটা ভারী হয়ে ওঠে। মায়ের ভালোবাসার সমান ভালোবাসার পারদ ছিল আমার নানির কাছে।

মা দিবসেও আমি মুখ ফুটে মাকে বলতে পারব না কিছুই। তবে বুকের মধ্যে অন্তরের অন্তস্তলে ‘মা, মা, মাগো’ করে ডাকতে থাকবে আমার ভেতরের আমি।