বেপরোয়া
শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুফির আগমন। তার পৈতৃক অংশের জমি প্রদানে, বাপ-চাচারা টালবাহানা করছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে ঝগড়া। মৃত্যুর সময় দাদা, ফুফিকে পাকা সড়কের পাশে ৫ শতাংশ জমি দেওয়ার—অসিয়ত করে যায়। বাবা–চাচারা, সে অসিয়ত আমলে নিচ্ছে না। তারা শর্তের আবর্তে জমি হস্তান্তর করতে চাচ্ছে।
রাতের ডাইনিং টেবিলে বাবার জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন।
আজকাল আমাদের জীবনটা কেমন অশান্ত হয়ে উঠছে?
বেপরোয়া গতির প্রভাবে এমনটা হচ্ছে।
আমার মতামতের সপক্ষে আবেগতাড়িত হয়ে, মায়ের অভিমত।
আসলেই তাই! ড্রাইভাররা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়! তাতে মানুষ মরে! বরণ করে পঙ্গুত্ব!
মায়ের মুখ থেকে কথাটি কেড়ে নিয়ে, বললাম।
‘তুমি তো মা—একদিকের কথা বললে।
আরও দিক আছে নাকি!
সব ক্ষেত্রেই বেপরোয়া গতি আছে। এক কথায়, যেখানে স্বার্থ, সেখানেই দৃশ্যমান হবে বেপোরোয়া গতির নৃত্য।
কী রকম?
বাবার প্রশ্নের উত্তরে নৈতিক ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করি।
ফুফুর পৈতৃক সম্পত্তির অংশ প্রদানে, তোমরা যে টালবাহানা করছ। এ...টা...তো... বাবা, বেপরোয়া বণ্টনের মনোভাব।
এ কথায় উনুনে মাছ ভাজার মতো ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে ওঠে, বাবা। আমি তখন অসুন্দর সত্যটা প্রকাশ করি।
বাবা, ফুফির ছোট মেয়ের সঙ্গে মেজ চাচার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব প্রদান। তোমাদের স্বার্থজনিত বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
তাতে সমস্যা কী?
আপা, শিক্ষিত চাকরিজীবী আর মামুন ভাই অপকর্মে সিদ্ধহস্ত।
তাতে কী?
তাতেই অনেক কিছু। স্বার্থের জন্য তোমাদের খাপছাড়া বেপরোয়া মনোভাব দেখলে...লজ্জায় মাথা কাটা যায়।
চুপ থাক!
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
মায়ের ধমক খেয়ে শান্ত কণ্ঠে বললাম।
তুমি ও... তো... মা, বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে,
মামার ব্যবসার জন্য... বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাওলাত নিলে।
‘তোর মামা, ফেরত দিয়ে দেবে।
‘মামার মনেও তো বেপরোয়া মনোভাব থাকতে পারে!’
‘কী রকম?
‘দেখো না! মামা না আবার আমার জন্য—তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে!’
‘এটা কোনো কথা হলো!’
‘এটাই কথা মা! এটাই কথা! ধরো, তোমার পৈতৃক অংশের সম্পত্তির বণ্টনে, এটাও তো মামার—অন্য রকম বেপরোয়া মনোভাব হতে পারে।’
আমার সার্বিক অনাকাঙ্ক্ষিত সত্য প্রকাশে, মা–বাবা আমার দিকে বেপরোয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
*লেখক: শেখ মোহাম্মদ আলী, ৭২ কলেজ রোড, গফরগাঁও পৌরসভা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।