নারী দিবস: উৎসব নাকি প্রতিবাদ?

নারী নির্যাতনপ্রতীকী ছবি

নারী দিবস এলেই আমরা দেখি ফুল, শুভেচ্ছাবার্তা, নানা আয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে বাধ্য—এই দেশ কি সত্যিই নারী দিবসের উপযুক্ত? যেখানে প্রতিদিন কোনো না কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, যেখানে নির্যাতিত নারীর চেয়ে অপরাধী বেশি নিরাপদ, সেখানে নারী দিবস উদ্‌যাপন কতটা অর্থবহ?

নারী দিবস মানে কেবল আনন্দের দিন নয়; এটি এক প্রতিবাদের দিন। এই দিনে আমরা নারীর অধিকার নিয়ে যত কথাই বলি না কেন, বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজ এখনো নারীদের জন্য নিরাপদ হয়ে ওঠেনি। রাস্তায় বের হলে নারীরা নিপীড়নের শিকার হন, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন, ঘরে-বাইরে নির্যাতনের শিকার হন। ধর্ষণের বিচার পেতে বছর কেটে যায়, অনেক সময় বিচার হয়ও না। অথচ অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ক্ষমতাবানদের ছত্রছায়ায় থাকে।

আমরা নারী স্বাধীনতার কথা বলি, কিন্তু সমাজের একাংশ এখনো মনে করে, নারীর জায়গা কেবল চারদেয়ালের ভেতরে। যদি কোনো নারী নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চান, নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, তবে তাঁকে নানাভাবে অপমান ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের দেশে নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই নিরাপত্তার চিন্তায় ভীত থাকেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনীতি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের লড়াই করতে হয় নিজেদের জায়গা তৈরি করার জন্য।

তাহলে কি নারী দিবসের কোনো প্রয়োজন নেই? অবশ্যই আছে! তবে এটি কেবল ফুল ও শুভেচ্ছার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নারী দিবস আসলে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের সমাজ এখনো কতটা পিছিয়ে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা এখনো সেই সমাজ চাই, যেখানে নারীরা নিরাপদে চলতে পারবেন, যেখানে প্রতিটি অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে, যেখানে নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে, শুধু নারী হিসেবে নয়।

নারী দিবস উদ্‌যাপনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা। কেবল একটি দিন নয়, সারা বছর ধরে আমাদের কাজ করতে হবে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সমানাধিকারের জন্য। নারী দিবস তখনই প্রকৃতভাবে সফল হবে, যখন সমাজের প্রতিটি নারী নির্ভয়ে পথ চলতে পারবেন, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন, যখন কোনো নারীকে আর নির্যাতনের শিকার হতে হবে না।

তাই নারী দিবসের প্রকৃত অর্থ হলো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের জন্য আমাদের সবাইকে—নারী ও পুরুষ উভয়কেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সমাজকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নারী দিবস কেবল একটি প্রতীকী দিন নয়, বরং নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রতিফলন হবে।

* লেখক: বুশরা আজমী, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী কলেজ