পুরোনো খামের উষ্ণতা

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ফাইল ছবি প্রথম আলো

৯ অক্টোবর, বিশ্ব ডাক দিবস। প্রযুক্তির এই দৌড়ঝাঁপের যুগে ‘চিঠি’ শব্দটা এখন অনেকটাই নস্টালজিয়ার মতো শোনায়। অথচ একসময় মানুষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগমাধ্যম ছিল ‘চিঠি’। কাগজে লেখা সেই চিঠির প্রতিটি শব্দে মনের আবেগ, ভালোবাসা, অপেক্ষা আর হৃদয়ের অভিব্যক্তি জড়িয়ে থাকত।

চিঠি শুধু খবর পৌঁছে দিত না, এটি ছিল অনুভূতির বাহক। দূরে থাকা সন্তানের কাছে মায়ের হাতের লেখা চিঠি, প্রবাসে থাকা স্বামীর কাছে স্ত্রীর প্রতীক্ষায় ভরা কয়েকটি লাইন, কিংবা শহরে থাকা বাবার কাছে আদুরে মেয়ের আবদার-ভরা কথা—এই চিঠিগুলোই সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখত। ডাকপিয়ন তখন ছিলেন সুখ-দুঃখের বার্তাবাহক। গ্রামের মানুষ পথ চেয়ে থাকতেন তাঁর আগমনের জন্য। কখনো আনন্দভরা বার্তা পেয়ে মন ভরে উঠত, আবার কখনো দুঃসংবাদ পেয়ে চোখ ভিজে যেত নোনা জলে।

আজ অবশ্য সবকিছু বদলে গেছে। পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। মুহূর্তেই খবর পৌঁছে যায় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। হোয়াটসঅ্যাপ, ই–মেইল, মেসেঞ্জার বা ভিডিও কলের যুগে কেউ আর খাম-ডাকটিকিটের ঝামেলায় যেতে চান না। কিন্তু দ্রুততার এই জগতে আমরা হয়তো হারিয়েছি সেই ধীর, মায়াময় সংযোগটা, যেখানে কলমে লেখা শব্দের কালিতে থাকত হৃদয়ের কথা আর প্রতিটি চিঠি আসার আগেই থাকত একরাশ উচ্ছ্বাস।

আজ ডাকপিয়নের ব্যস্ততা নেই, পোস্টবক্সগুলো রংহীন, পড়েছে ধুলার আস্তরণ, ডাকঘরগুলোও হয়ে গেছে জরাজীর্ণ। একসময় তুমুল ব্যবহৃত চিঠি আজ প্রায় বিলুপ্ত। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়া খামের উষ্ণতা, প্রতিটি লিখিত শব্দের অন্তরের আন্তরিকতা, স্মৃতিতে থাকবে সব সময়।

*লেখক: আবীর আল নাহিয়ান, শিক্ষার্থী, এমসি কলেজ, সিলেট