দ্বি এমসিজে

ছবি: লেখক

যেতে নাহি চাহে মন,
তবু চলে যেতে হয়।।
যেতে নাহি দিব হাই,
তবু যেতে দিতে হয়।

হাজারো স্বপ্ন নিয়ে আঁধার পেরিয়ে কোনো এক সময় পৌঁছেছিল আলোর প্রাঙ্গণে। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন পূরণে বিক্ষিপ্ত মনগুলোকে একই সূত্রে গেঁথে রাখতে স্বপ্নবাজদের মিলিত হওয়া। কিন্তু সময়ের লীলাখেলায় স্বপ্ন পূরণের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করতে সপ্নবাজদের বিদায় নিতে হয় চিরচেনা প্রাঙ্গণ থেকে। যেন আঁধারের গর্ভে বিলীন হওয়া এক প্রজ্বলিত আলোর দিকে ছোটার একাগ্র প্রয়াশ।

গল্পের শুরুটা ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভাষা ও ভালোবাসার মাস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একদল তরুণ-তরুণী, ভালোবেসে ভর্তি হয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। তাঁরা সংখ্যায় ৪৭ জন। তাঁদের সংক্ষিপ্ত নাম দ্বি এমসিজে। বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ।

ক্যাম্পাস জীবনের কতশত স্মৃতি। রুটিনমাফিক ক্লাসে আসা। ক্লাস শেষে ছোট ছোট দলে আড্ডায় মেতে ওঠা। গন্তব্য অজানা জেনেও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। কারণে–অকারণে প্রাণ খুলে হাসা। সময়ে–অসময়ে গান ধরা। সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোয় অংশগ্রহণ করা। তাঁদের মধ্যে মতভেদ ছিল, অভিমান ছিল, ছিল ভালোবাসাও। এইভাবে ভালো লাগা, খারাপ লাগা, মনোমালিন্য আবার বন্ধুত্বের খুনসুটিতে মেতে ওঠা। হয়তো এখন আর কিছুই করা হবে না, শোনা হবে না বন্ধুত্বের রূপকথার গল্প।

ছবি: লেখক

৫০ একরের ছোট ক্যাম্পাস। তাতে কী, ৪৭ জনের মন তো আর এইখানেই সীমাবদ্ধ নেই। মনের ক্যাম্পাসের তো আর বিশালতা পরিমাপ করা যায় না। ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনে ভবনে, চত্বরে চত্বরে, মিনারে মিনারে, মঞ্চে মঞ্চে প্রতিধ্বনিত হবে দ্বি এমসিজে। একসময়ের তাদের পদচারণে মুখরিত স্থানগুলো আগলে রাখবে তাঁদের স্মৃতি।

ক্যাম্পাসের সব স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় অনুভূতিরা সব বন্দী হয়ে গেছে। তৎকালীন ক্যাম্পাস আর বর্তমান সুসজ্জিত ক্যাম্পাসে তাঁদের স্মৃতি, কৃষ্ণচূড়া আর জারুলে তাঁদের স্মৃতি। ক্যাম্পাসের লাল–নীল বাসে তাঁদের স্মৃতি। ফ্যাকাল্টিতে, বিভাগে, সিঁড়িতে, করিডোরে, ক্লাসরুমে তাঁদের স্মৃতি। কুবিয়ানদের স্মরণে থাকবে তাঁরা, বিশেষ করে এমসিজিয়ানদের। এমসিজে বিভাগের সমৃদ্ধির শিকড়ে তো তাঁরাই। তাঁরা না এলে হয়তো অনেক কিছুই হতো না।

ছবি: লেখক

বিদায়ের ছায়া পড়েছে এই প্রাঙ্গণে, অশ্রুসিক্ত লোচনে স্মৃতির ভাঙনে। দেখতে দেখতে দীর্ঘ ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখন সময় বিদায়বেলার। তবে মনের ৯ শরীরের। বিদায় জানানোর জন্য রাঙিয়ে তোলা হলো প্রিয় প্রাঙ্গণকে। আকাশি আর গোলাপি রঙের সাজে তাঁরা বোধহয় বিদায়ের ইঙ্গিত দিল প্রিয় প্রাঙ্গণকে। বিদায় শব্দটি বিষাদময় হলেও প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে ধারাবাহিকভাবে আসে বিদায়ের আবেগঘন মুহূর্ত।

লেখক: হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়