প্রত্যাশা এখন রাজনৈতিক সংস্কার...!
শিক্ষার্থীদের হাজারো ত্যাগ ও গণ–অভ্যুথানের পর নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে জানাই অভিনন্দন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব থেকে শুরু করে সরকারের সব উপদেষ্টা সর্বজনস্বীকৃত সুশীল নাগরিক এবং পেশাজীবী হওয়ায় সরকারের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকবে এবং আশা করছি এই সরকার সেসব প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে।
কিন্তু এ সরকার, বিশেষত এসব শিক্ষার্থীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ‘রাজনৈতিক সংস্কার’। উন্নত দেশগুলোতে রাজনীতির যে ব্যবস্থা, স্বাভাবিকভাবেই আমরা তা অনুসরণ করি না। যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে রাজনীতি একটা সামাজিক সেবার মতো—সাধারণ পেশাজীবী মানুষ রাজনীতি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে টিম ওয়ালজের মতো একজন স্কুলশিক্ষক ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করছেন; যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদের কার্যত কোনো ‘পেশা’ নেই, তাঁরা কেবলই রাজনীতিবিদ। দৃশ্যমানভাবেই এটা হওয়ার মূল কারণ আমাদের সিস্টেম, আমাদের ব্যবস্থপনায় রাজনীতিই একটি পেশা...!
সুশীল সমাজের নাগরিকেরা অথবা পেশাজীবীরা রাজনীতির চরমতম বাজে দিকগুলোর কারণে রাজনীতিতে যুক্ত হন না বা যুক্ত হতে চানও না। অথচ সাধারণ জনগণের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারবে সাধারণ মানুষ হিসেবে জনসাধারণের সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হওয়া একজন সাধারণ মানুষই...!
আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণেই সমাজের উচ্চশিক্ষিত এবং ‘ফাইনেস্ট ব্রেইন’ মানুষগুলো রাজনীতে যুক্ত হন না। কিন্তু এই মানুষগুলো যুক্ত হলে সহজেই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে আমাদের দেশটাই আমূল পরিবর্তিত হয়ে যেত। ছাত্রসমাজের এই বিপ্লবে জনগণ পূর্ণ সমর্থন দিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। তাই একই সঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জ আর অনেক সম্ভাবনার এই সময়ে প্রত্যাশা করব ‘রাজনৈতিক সংস্কারের’...!
বাংলাদেশের এত বছরের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা তো হুট করে আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবু আশা করব, এ সরকার, বিশেষত গত আন্দোলনে উজ্জীবিত-জাগ্রত এই ছাত্রসমাজ এবং গণমানুষ রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওই সংস্কার শুরু করবে, যেখান থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি সুস্থ ধারায় ফিরবে এবং যেখানে একজন সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে অংশ নিয়ে জনসাধারণের জন্য কাজ করতে পারবে।
*লেখক: ফাত্তাউর রহমান ইমন, প্রকৌশলী, ঢাকা, বাংলাদেশ।
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]