১৮–তে আলোকিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
লাল মাটির সবুজ ক্যাম্পাস, তার মাঝে ছোট–বড় পাহাড়ের হাতছানি। যত দূর চোখ যায়, শুধু নীলাচলের মতোই মন কাড়ে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ চারদিকে ভেসে আসে, মনকে এক অজানা অনুভূতিতে জাগিয়ে তোলে। এরই মাঝে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ ঘিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মধ্য-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ রোববার ১৮তম বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কুমিল্লার কোটবাড়ীতে উঁচু-নিচু পাহাড়, টিলা আর সবুজের বুক চিরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় ২০০৬ সালের ২৮ মে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করাই এখন আমাদের নতুন ভিশন। আর এ ভিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমি চাই আমার ছাত্র, শিক্ষক এবং আমার অফিসারসহ আমাদের কমিউনিটির যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই যেন কাজ করেন।’ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব ডিপার্টমেন্ট খোলা রাখার জন্য বলা হয়েছে এবং প্রাক্তন যারা আসবে, তাদের স্বাগত জানানোর জন্যও বলা হয়েছে।’
২০০৬ সালের ২৮ মে মাত্র ৫০ একর জায়গা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন লালমাই পাহাড়ে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে অন্যতম এক উচ্চশিক্ষার আবাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে মেগা প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আড়াই শ একরের ক্যাম্পাস। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প পাস হওয়ার পর গত বছর পুরো উদ্যমে কাজ শুরু হয় নতুন ক্যাম্পাসটির।
মাত্র ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী, ১৫ শিক্ষক ও ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ বিদ্যাপীঠে ৬টি অনুষদের অধীন ১৯টি বিভাগে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছে বিভিন্ন বিভাগের ১২টি ব্যাচ। তাদের অনেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশ তথা মানবজাতির কল্যাণে বেড়িয়েছে। তাঁদের পদচারণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসহ দেশের বাইরেও বিদ্যমান।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নানাভাবে ঐতিহ্য বহন করছে। ধারণা করা হয়, এখানে মাটির নিচেও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, আবার মাটির ওপরেও বর্তমানে আছে। প্রাচীনকালে প্রাচীন বাংলার ‘সমতট’ রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘লালমাই-ময়নামতী’। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে (কারও কারও মতে সপ্তম শতাব্দী) দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ওই রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৫০০ মাইল। সপ্তম শতাব্দীতে চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব এখানে আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৮টি নীল বাস এবং বিআরটিসির ৯টি ভাড়া বাসসহ মোট ১৭টি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যও যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে।
যেখানে ছাত্রদের জন্য তিনটি, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি আবাসিক হল। এ ছাড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে দুটি ডরমিটরি ও একটি গেস্টহাউস।
তবে প্রতিষ্ঠার ১৮তম বর্ষে এসেও মেলেনি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব। হিংসাত্মক রাজনীতির কারণে বারবার সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো কাটেনি আবাসনসংকট, পুরোপুরি কাটেনি সেশনজট। চলমান রয়েছে পরিবহনসংকট, হল ও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান উন্নয়নের সুযোগ আছে এবং লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইসংকটসহ নিয়মিত সমাবর্তন না করার ব্যর্থতা।
প্রিয় বিদ্যাপীঠ ঘিরে প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিল্পচর্চায় বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সেরা র্যাংকিংয়ে অবস্থান করবে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবে। জন্মদিনের শুভক্ষণের প্রাণের ক্যাম্পাসের প্রতি রইলো নিরন্তর ভালোবাসা ও শুভকামনা।
প্রেরক: জুবায়ের রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়