প্রত্যাশা, যুবক বয়সে প্রথম আলোর পথচলা আরও ক্ষুরধার হোক
আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। সারা দিনে আমি যা–ই করি না কেন, প্রথম আলো পত্রিকা পড়তেই হবে। যত রাতেই হলে ফিরি না কেন, রিডিং রুমে গিয়ে প্রথম আলোয় চোখ বোলাতেই হবে, না হলে ভালো ঘুম হবে কী করে? শুধু আমি নই, আমার সময়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের অনেক বন্ধুদের এমন দেখেছি।
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচ্ছদ, কার্টুন, বর্ণবিন্যাস, শব্দচয়ন, সংবাদের বৈচিত্র্য, ফিচার, রিপোর্টারদের সাহসিকতা, কলাম লেখকদের বিশ্বজনীন লেখার মান আমাকে মুগ্ধ করেছে। বেসিক আলী, বাসার ভাই প্রথম আলোর অনন্য সৃষ্টি।
তৃণমূলের সংবাদ তুলে আনার পদ্ধতি, মানুষের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার গল্প, মানুষের কষ্টের কথা, হতাশার কথা, ভালোবাসার কথা, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আমাকে অভিভূত করেছে। মানুষের পাশে থাকার আহ্বান আমি দেখেছি প্রথম আলোয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত কিছু সংবাদ পাঠের রেশ থেকে গেছে কয়েক দিন পর্যন্ত।
প্রথম আলোই বাংলাদেশে প্রথম নাগরিক সংবাদ বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকদের সাবলীল লেখা ও ছবি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই লেখা ও ছবি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কথা, এই দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরছে। প্রবাসী লেখকেরাও তাদের অনুভূতি, অভিযোগ ও ভালোবাসা নাগরিক সংবাদ বিভাগে প্রকাশ করতে পারছেন।
শাসক, শোষিত যে–ই হোক, প্রথম আলো সত্যের পথে। প্রথম আলো সাহসিকতার সঙ্গে নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে। আর সেই সঙ্গে নিপীড়কদের পরিচয় প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না।
প্রথম আলো কি শুধুই একটা পত্রিকা? সংবাদ ছেপেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? প্রথম আলো একজন সাধারণ সৃজনশীল মানুষের জন্য বাতিঘরের কাজ করে। প্রথম আলো বন্ধুসভা, বিজ্ঞানচিন্তা, গণিত অলিম্পিয়াড, জিপিএ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা, বন্যার্তদের ত্রাণ প্রদান, শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, মাদকবিরোধী র্যালি ও কনসার্ট, কিশোর আলো ম্যাগাজিন, প্রথম আলো ট্রাস্ট, মেরিল প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরস্কার; প্রথম আলো পত্রিকায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে। এ উদ্যোগ তরুণসমাজকে সঙ্গে নিয়ে সামনের পথে চলা। শুধু পত্রিকা বিক্রি বা সংবাদ পরিবেশন নয়; বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য প্রথম আলো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। যা একজন সাধারণ মানুষের কাছে গর্বের বটে।
প্রথম আলো বর্ষপূর্তি সংখ্যার লেখা আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ১০ বছরের বেশি সময় প্রথম আলো বর্ষপূর্তি সংখ্যা পড়ছি। যতই পড়ছি, ততই সমৃদ্ধ হচ্ছি। সেরা লেখক, সেরা বিজ্ঞানী, সেরা সাহিত্যিক, সেরা নাট্যকার, সেরা ক্রীড়াবিদ, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ দেশসেরা মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ লিখে যাচ্ছেন প্রথম আলো পত্রিকায়। তাঁদের ব্যক্তিজীবনের অজানা ঘটনা যেমন আমাকে আন্দোলিত করছে, তেমনি আমার মনে তাঁদের সাফল্য দোলা দিয়ে গেছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ যেমন এক অনবদ্য উপন্যাস, তেমনি প্রথম আলোও বাংলাদেশের এক অনন্য পত্রিকা। সুনীলের প্রথম আলো পড়ার পরে অনেক দিনের রেশ ছিল। যখন থেকে প্রথম আলো পেপার পড়া শুরু করেছি, আর বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যতই পড়ি প্রথম আলো না পড়লে পেপার পড়ায় সম্পূর্ণতা আসে না, মন ভরে না। মনে হয়, প্রথম আলো পড়া হয়নি, কোনো নিউজ বাদ গেল না তো! কোনো সাম্প্রতিক আর্টিকেল পড়া মিস হলো না তো?
প্রথম আলো সংবাদ উপস্থাপনায় এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। জীবন বদলে দেওয়ার মতো খবর এখানে পরিবেশন করা হয়। ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ স্লোগানের সারথি আমরাও হতে পারি। প্রথম আলো নতুন পাঠক তৈরি করেছে, পাঠক ধরে রেখেছে এবং পাঠককে লেখক হিসেবেও তুলে ধরেছে। সমাজের জন্য প্রথম আলো এক বাতিঘর স্বরূপ।
গত ৪ নভেম্বর ২০২৩ প্রথম আলো ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। প্রত্যাশা করি, যুবক বয়সে প্রথম আলোর পথচলা আরও মসৃণ ও ক্ষুরধার হোক।
লেখক: গল্পকার ও কবি