আগে শোনা যেত, রাজনীতির ভেতরে পলিটিকস ঢুকে গেছে। এখন মনে হয়, পলিটিকস নয়, অজস্র কিছু রাজনীতির অনেক গভীরে ঢুকেছে, যা বের করে আনার পদ্ধতি কারও জানা নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জনগণের বিজয় হয়েছে, এই কারণে যে এক পক্ষ ধন্যবাদ দিল বর্জনের জন্য, আরেক পক্ষ অভিনন্দন জানাল অংশগ্রহণের জন্য! আপনি যদি এই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন গ্রহণ না করতে পারেন, তাহলে জনগণ হিসেবে খুবই দৃষ্টিকটু হবে, মনে হবে, এ দেশে আপনার বাস করা খুবই বেমানান!
গত ১৫–২০ বছরের ঘটনাপ্রবাহের আলোকে রাজনীতির একটি সংজ্ঞা এভাবে বলা যায়, রাজনীতি হলো একটি কৌশল ও অপকৌশলের খেলা, যেখানে জয়ী হতে হলে দুভাবেই প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি দুভাবেই প্রতিপক্ষের কাছে দারুণভাবে বারবার পরাস্ত হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তিনটি টার্ম আন্দোলন করল, কিন্তু একটি কার্যকর রূপরেখা জাতির সামনে হাজির করতে পারেনি। বিএনপি কি বাতিল ব্যবস্থাটি ফিরিয়ে আনতে চাইছে, না নতুন কোনো ফর্মুলা রয়েছে—এটা এত দিন পর্যন্ত জাতিকে জানাতে পারেনি। যদি কোনো ফর্মুলায় উভয় পক্ষ রাজি হয় এবং সে সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচনে বিএনপি হেরে যায়, তাহলে সে নির্বাচন মানবে কি না অথবা জয়ী হলে নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতিটি টেকসই করবে, নাকি আদালতের মাধ্যমে বাতিল করে দেবে, এই বিষয়গুলো যত দিন পরিষ্কার না হবে, তত দিন তারা বৃহত্তর তরুণ-যুবসমাজ তথা অধিকাংশ জনগণকে আন্দোলনে শামিল করতে পারবে বলে মনে হয় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা ইত্যাদি নির্বাচনী সংস্কার একসময় আওয়ামী লীগই আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করেছে। আজ আওয়ামী লীগ যেভাবে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনগুলো আয়োজন করছে এবং পরে সরকার গঠন করছে—এই প্রক্রিয়াগুলো তাদের সঙ্গে সত্যিই মেলানো যায় না। এতে হয়তো টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া বা সরকার গঠন করা যায় কিন্তু গৌরবের অংশ হওয়া বা ইতিহাস রচনা করা যায় না। ভবিষ্যতে ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়ে এগুলো যেভাবে লেখা হবে এবং তাতে আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বকে ভুগতে হতে পারে, মূল্য দিতে হতে পারে। কারণ, বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে বিএনপি যে সমস্যা বাধাল, তার মাশুল দলটি এখন পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কেউ চার-পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে বলে মনে হয় না। টানা ক্ষমতায় থেকে অবশ্যই অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীতে টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—এগুলো প্রতিপক্ষ স্বপ্ন দেখত কি না, সন্দেহ আছে। আপনারা তো জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করেন, তাই প্রত্যাশা করি, সবার জন্য এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করুন, যাতে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর আন্দোলন করতে না হয়, মানুষকে পুড়তে না হয়, মরতে না হয় এবং রাজনীতি সমস্যামুক্ত থাকে।
*লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক