অস্তিত্বসংকটে কুতুবদিয়া, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে শত কোটি টাকা খরচ করে ২০২৪ সালে নির্মাণ হয়েছিল ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এখন বাঁধের নড়বড়ে অবস্থা। সম্প্রতি তোলাছবি-প্রথম আলো

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া—প্রায় ৬০০ বছর আগে কক্সবাজার থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। বাংলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ নানান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। রয়েছে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা। এই অপার সম্ভাবনার মধ্যেও কুতুবদিয়া বরাবরই অবহেলিত। সারা দেশে এত উন্নয়ন, কিন্তু এ উন্নয়ন আজও স্পর্শ করেনি কুতুবদিয়াকে। চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে যাতায়াতব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।

সূচনালগ্ন থেকেই  ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করেছে এ উপকূলকে। ১৫৫৯, ১৭৯৫–এর ঘূর্ণিঝড়। কুতুবদিয়া বিখ্যাত বাতিঘরের জন্য। ১৮২২ সালে নির্মিত সেই ঐতিহাসিক বাতিঘর বিলীন হয় ১৯৬০–এর জলোচ্ছ্বাসে, (পরবর্তী সময় নতুন বাতিঘর তৈরি হয়)। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। প্রাণ হারান প্রায় ১০ হাজার মানুষ। লন্ডভন্ড হয়েছিল পুরো কুতুবদিয়া।

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

কুতুবদিয়ার লাখো মানুষ আজও রাত্রি যাপন করছেন অনিশ্চয়তায়। এ সংকটের মূলে রয়েছে স্থায়ী বেড়িবাঁধের অভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা, বাড়ছে দুর্যোগ। এ দুর্যোগের হিংস্রতা কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায়। কুতুবদিয়ার চারপাশে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশির ভাগ অংশেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নেই।  এ কারণে সামান্য দুর্যোগেই প্লাবিত হয় এই উপকূল। বর্ষাকালে এ দুর্যোগ বেড়ে যায় হাজার গুণে। এ সময় সামান্য বৃষ্টিতে সাগরের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে একটু বাড়লেই যেসব বালির বাঁধ দেওয়া হয়, তা ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ পেশায় কৃষক, লবণচাষি ও জেলে। এ পরিস্থিতিতে ফসলি জমি লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়, পুকুরের মাছ মারা যায়, গাছপালা উজাড় হয়, লবণ চাষের জমি নষ্ট হয়। ফলাফলস্বরূপ, খাদ্যসংকটে ভোগে পুরো দ্বীপ। এ ছাড়া মানুষ ও পশু–পাখি হারায় তাদের সহাবস্থান। বিশুদ্ধ পানির সংকটে নানান অসুস্থতায় মৃত্যু হয় অনেকের। ২১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপ ভাঙনের কারণে ক্রমে দুই-তৃতীয়াংশ আয়তন হারিয়েছে। এখনো সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুতুবদিয়া।

কুতুবদিয়ার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। লাখো মানুষের প্রাণের দাবি—স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু বাজেট বেড়িবাঁধের জন্য হলেও স্বার্থান্বেষী মহল সেই টাকা লুটে নিয়ে ধরিয়ে দেয় বালুর কিছু বস্তা। এ দ্বীপের দুই লাখ মানুষ চান তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা। এটা তাঁদের অস্তিত্বের লড়াই। তাঁরা চান যথাযথ উপায়ে কুতুবদিয়ার চারপাশে যেন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেনাবাহিনীকে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ দিতে হবে, যেন কাজটি দ্রুত হয় এবং কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেন প্রভাব ফেলতে না পারে।

লেখক: আবতাহী চৌধুরী আইভী, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা