দেখা না অদেখার গল্প

ছবি: লেখকের পাঠানো

রোদের তাপে গলতে থাকা দুপুর। শহরের এক মোড়ের পাশে চারজন বসে থাকে প্রতিদিন—মোশারফ, হাবিব, কুদ্দুস আর মজনু। চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখে আলো নেই, কিন্তু মনের আলো অটুট।

তারা বসে থাকে রাজধানীর অভিজাত এলাকার ব‌্যস্ততম ফুটপাতে। এক‌টি বিপণিবিতা‌নের সিঁড়ি‌তে হাতের কাঁসার বাটি সামনে রেখে। পথচারীরা কয়েন ফেলে যায়—কেউ মমতা থেকে, কেউ তুচ্ছভাবে। কিন্তু ওদের হাসির শব্দেই যেন আশপাশের ধুলামলিন দুপুরটাও একটু প্রাণ পায়।

মোশারফ রসিক, প্রায়ই বলে, ‘আজ হাবিবের বাটিতে কয়টা কয়েন পড়ছে শুনে মনে হয় প্রেমিকার চিঠি পড়ছে সে!’ সবাই হেসে ওঠে।

কুদ্দুস বলে, ‘তুই না থাকলে এই অন্ধ জীবনে হাসিটাই হারিয়ে ফেলতাম রে!’

ওরা একে অপরের কণ্ঠে আলো খোঁজে, বাতাসের শব্দে সময় বোঝে আর মানুষের পায়ের শব্দে জীবনের গল্প শোনে।

দিন শেষে তারা ভিক্ষার টাকাগুলো একসঙ্গে গুনে, ভাগ করে নেয় সমানভাবে। কখনো কম হয়, কখনো বেশি; কিন্তু ওদের মুখে তবু হাসি।

নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

মজনু বলে, ‘চোখে আলো না থাকলেও মনটা যেন অন্ধ না হয়, এই চাই।’

একদিন এক পথচারী থেমে ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা একসঙ্গে বসো কেন?’

হাবিব হেসে বলল, ‘কারণ, আমরা একে অপরকে দেখি না, কিন্তু বুঝি। আলো দেখা যত না দরকার, বোঝা তার চেয়েও বেশি।’

বাতাস থেমে গেল কিছুক্ষণের জন্য। আর সেই দুপুরে, চারজন অন্ধের পাশে সূর্যের আলোটা যেন একটু বেশি পড়ল।