মুহূর্তেই ভস্মীভূত হাজারো স্বপ্ন

বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড
ছবি: আবু তাহের সোহেল

গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, গুলিস্তানের পর এবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার রাজধানীর বঙ্গবাজার। বঙ্গবাজারের খুব নিকটেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর অবস্থিত, যার ফলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হন। কিন্তু সেখানে ছিল না পর্যাপ্ত পানির জোগান। আশপাশের বিভিন্ন ভবন, মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হাতিরঝিল থেকে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী। তারপর সাড়ে ছয় ঘণ্টার প্রাণপণ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আজকের আগুনে মুহূর্তেই ভস্মীভূত হয়ে যায় শত শত দোকান। শুধু বঙ্গবাজারই নয়, বরং বঙ্গবাজারের পাশের তিনটি মার্কেটও রেহাই পায়নি অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা থেকে। শুধু তা–ই নয়, মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায় আশপাশের ভবনগুলোও। দ্রুতই ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই অগ্নিদগ্ধ ভবন থেকে মালামাল উদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। ওই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে বঙ্গবাজারের দোকানগুলোর সঙ্গে সঙ্গে ভস্মীভূত হয়েছে হাজারো ব্যবসায়ীর কর্মসংস্থানের উৎস, যার পেছনে তাঁরা বিনিয়োগ করেছেন তাঁদের সর্বস্ব। রাত–দিন ঘামঝরা পরিশ্রম, সূক্ষ্ম পরিকল্পনা, বিপুল পরিমাণ অর্থ ও একগুচ্ছ স্বপ্ন দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন তাঁদের ব্যবসা। কিন্তু পুরোটাই হার মেনে গেল অগ্নিকাণ্ডের নিষ্ঠুরতার কাছে। তাঁদের এ বিপুল বিনিয়োগের আর কোন কিছুর অবশিষ্ট নেই। দীর্ঘ সময়ের এত এত পরিশ্রম যেন এখন শুধুই দগ্ধাবশেষ। তাঁদের দীর্ঘদিনের জমানো সম্পদ চোখের সামনে জ্বলতে দেখে তাঁরাও নিতান্তই অসহায়। মুহূর্তের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা হারালেন তাঁদের আয় রোজগারের মাধ্যম, পাশাপাশি মেনে নিল লাখো টাকার লোকসান। এ শোকের ছায়া কত দিনে কাটবে বা কত দিনই তাঁদের বেকার বসে থাকতে হবে তার নেই কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা। এই শোক সামলিয়ে কীভাবে তাঁরা নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন বা আদৌ করতে পারবেন কি না, তার নেই কোনো নিশ্চয়তা। এ অগ্নিকাণ্ড যেন তাঁদের ঠেলে দিয়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির অনিশ্চিত সমাপ্তির দিকে।

এ অগ্নিকাণ্ড শুধু দোকানগুলোকেই ভস্মীভূত করেনি, বরং ভস্মীভূত করেছে হাজারো ব্যবসায়ীর স্বপ্ন, কেড়ে নিয়েছে হাজারো পরিবারের আয়ের উৎস, ছিনিয়ে নিয়েছে হাজারো পরিবারের ঈদের আনন্দ।

রমজানের শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে সব পরিবারেই কাজ করে অন্য রকম উত্তেজনা। শুরু হয় কেনাকাটা থেকে শুরু করে হাজারো রকমের প্রস্তুতি। কিন্তু এখন কেনাকাটা তো দূরের কথা, এ মুদ্রাস্ফীতির বাজারে পরিবারের মুখে দুই বেলা আহার জোগাতেই হয়তো হিমশিম খেতে হবে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। অনেক ব্যবসায়ীরা শুধু বঙ্গবাজারের দোকানের ওপর নির্ভর করেই পরিবারের সব দায়ভার বহন করতেন। ওই দোকানের ওপর ভর করেই এগিয়ে চলছিল সন্তানদের পড়াশোনা। ওই দোকানগুলোই পূরণ করত তাঁদের পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সব মৌলিক চাহিদা। কিন্তু মুহূর্তেই যেন থমকে গেল সবকিছু।

কিছু সময়ের ব্যবধানে হাজারো পরিবারের হাসি, আনন্দ, ভরণপোষণ, স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা সবকিছুই থমকে দাঁড়াল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দাঁড় প্রান্তে।

লেখক: সাবরিনা সুলতানা তিশা, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।