আপার হাতের খিচুড়ি আর রমজান

খিচুড়িছবি: প্রথম আলো

রাতের শেষ প্রহর, সাহ্‌রি শেষ করতেই আম্মার ফোন। ওপাশ থেকে পরিচিত সেই মমতাময়ী কণ্ঠ, ‘পুত, কী খাইলে সাহ্‌রিতে?’

আমি হেসে বললাম, ‘যা ছিল তা–ই খাইলাম, আলহামদুলিল্লাহ! ভালোই খেয়েছি!’

এরপরই আপার কণ্ঠ শুনলাম, যেন একগাদা চিন্তা মাথায় নিয়ে বলল, ‘তুই তো বাইরের তেলেভাজা খাস না, ইফতার করিস কীভাবে? চুনা–মুড়িও তেমন খেতে পারিস না!’

আপা জানে, আমি কী খেতে পারি আর কী পারি না। আমার প্রতিদিনের খাবারের হিসাব তার মুখস্থ। একটু দুষ্টুমি করেই বলল, ‘বাড়িতে আয়, আমি খিচুড়ি রান্না করব। তোর প্রিয় খাবার!’

আমি শুনে একমুহূর্ত চুপ করে থাকলাম। আপার হাতের খিচুড়ির স্বাদ আর কোনো কিছুতে পাইনি কখনো। কত জায়গায় খিচুড়ি খেয়েছি, কিন্তু তার হাতের রান্নার সেই শৈল্পিক স্বাদ আর মমতার পরশ কোথাও নেই। রমজানে খিচুড়িই বেশি খাই, যেন পেটের সমস্যা না হয়। খিচুড়ির সঙ্গে একটু তরল কিছু থাকলে তো কথাই নেই, একটু বেশিই খাওয়া হয় তখন!

আপা জানে, রমজানের সময় আমার মন কেমন একটা খালি হয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে বসে সাহ্‌রি-ইফতার করার দিনগুলো কত দূরের মনে হয়! তাই হয়তো আজ একটু আবেগপ্রবণ হয়ে বলল,

‘খারাপ লাগে রে! সেই অষ্টম শ্রেণি থেকে বাড়ির বাইরে থাকিস। এখনো একলাই রোজা রাখিস, সাহ্‌রি করিস, ইফতার করিস!’

শুধু একটু হাসলাম। কিন্তু জানি, এই হাসির আড়ালে কেমন একটা শূন্যতা কাজ করছে। বললাম, ‘এটা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, আপা! যা খেতে পারি না, সেটাও এখন খেতে হয়!’

কিন্তু সত্যি কি অভ্যাস হয়ে গেছে?

পরিবারের সঙ্গে বসে ইফতার করা, সাহ্‌রিতে আম্মার হাতের রান্না খাবার খাওয়া, আব্বার কোরআন তিলাওয়াত শোনা—এসব এখন কেবলই স্মৃতি! জীবনের প্রয়োজনে নিজেকে বদলাতে হয়, নতুন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু কিছু অভ্যাস হয়তো বদলায় না, কিছু স্বাদ হয়তো ভুলে যাওয়া যায় না।

তাই জানি, যত বছরই কেটে যাক, পৃথিবীর যেখানেই থাকি, আপার হাতের খিচুড়ির স্বাদ কখনো বদলাবে না। ওর রান্নার স্বাদে শুধু মসলা আর চাল-মুগ ডালের সংমিশ্রণ থাকে না, থাকে নিখাদ ভালোবাসার পরশ।

রমজানের ইফতারে কিছু স্বাদ শুধু জিবে নয়, হৃদয়ে লেগে থাকে...

লেখক: মোহাম্মদ এনামুল হক, শিক্ষার্থী মাস্টার্স আল–হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা চট্টগ্রাম।