ঈদে বাড়ি ফেরার টিকিট পাব কি
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বলা হয় ঈদুল ফিতরকে। মা–বাবা, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে ঈদ কাটাতে চান। সেই সঙ্গে ঈদে বড় ছুটি থাকে। ফলে রাজধানী ঢাকা ছাড়ার প্রবণতা এই সময় সবচেয়ে বেশি। অবশ্য সেই সঙ্গে আরেকটা শঙ্কাও থাকে, বাড়ি ফেরার টিকিট পাব তো?
বাংলাদেশের যে পরিবহনব্যবস্থা, সেখানে এমন উৎসবের মৌসুমে টিকিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের যেন ঐতিহ্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈদের আগে টিকিট কাটতে বাসের কাউন্টার বা রেলস্টেশনে টিকিটপ্রাপ্তির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো। হাজারো মানুষ টিকিট ছাড়ার আগের রাত, এমনকি দু–এক দিন আগে থেকেই ভিড় করেন কাউন্টার বা স্টেশনে। কিন্তু তারপরও অনেকেই পান না সেই কাঙ্ক্ষিত টিকিটের দেখা।
অবশ্য এই হয়রানি কমাতে ভূমিকা রেখেছে দেশের টিকিটব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন। গড়ে উঠেছে ডজনের বেশি ই-টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি, ইন্টারনেট–সংযোগের সহজলভ্যতা এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) জনপ্রিয়তার কারণে দিন দিন ই-টিকেটিং সেক্টর দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশেষ করে রেলওয়ে, বাস, লঞ্চ, এয়ারলাইনসসহ নানা খাতে টিকেটিং সেক্টরে অনলাইন টিকিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ খাতে ই-কমার্স, ডিজিটাল পেমেন্ট ও ক্যাশলেস সিস্টেমের ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ঈদের আগে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়েন। এই বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন ঢাকা ছাড়েন, তখন স্বাভাবিকভাবেই টিকিটের স্বল্পতা দেখা দেয়। শঙ্কায় থাকতে হয়, টিকিট পাব কি?
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করছে রেলওয়ে। ২৪ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৪ মার্চ; ২৫ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ মার্চ; ২৬ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৬ মার্চ; ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৭ মার্চ; ২৮ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৮ মার্চ; ২৯ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ১৯ মার্চ এবং ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রি করা হবে ২০ মার্চ। এ সময় ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে মরিয়া হয়ে ওঠেন মানুষ। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চাহিদা তৈরি হয় টিকিটের। রেলওয়ের হিসাবে, সাধারণ, স্পেশাল ট্রেনসহ এ সময়ে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য দিনে মাত্র ৩৫ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি করা হয়। টিকিট অনলাইনে ছাড়ার মিনিটের মধ্যেই লাখ লাখ হিট পড়তে থাকে টিকিট কেনার জন্য। দেখা যায়, কয়েক হাজারের বিপরীতে টিকিট মাত্র একটি। ফলে অসংখ্য মানুষ টিকিটবঞ্চিত থাকেন।
বাসে টিকিট প্রাপ্তিতেও রয়েছে নানা ভোগান্তি ও হয়রানির অভিযোগ। বেশির ভাগ বাস অপারেটর অবশ্য অনলাইনে টিকিট বিক্রি করলেও তা পর্যাপ্ত বলা যায় না। বাসে বাড়তি ভাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন ভরসা করেন ট্রেনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাঁরা ট্রেনের টিকিট করতে পারেন না, তাঁদের বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়েই বাসে ঢাকা ছাড়তে হয়।
মানুষের ভোগান্তি কমাতে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বেড়েছে এটা সত্যি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় টিকিটের স্বল্পতায় অনেকেই দ্বিধায় থাকেন, টিকিট পাব তো! তারপর সড়কে ঈদযাত্রায় চাপ বাড়লে দুর্ঘটনা ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে তৈরি হয় যানজট। ফলে ঢাকা ছাড়া গাড়ি ফিরে আসতে না পারলে ভোগান্তি আরও বাড়ে। তাই ঈদে সড়কে সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটা ভালো ব্যবস্থা যদি করা যায়, তাহলে মানুষের ঈদযাত্রাকে সত্যিই আনন্দদায়ক করা যাবে।
* লেখক: ইমরান হোসেন মিলন, বেসরকারি চাকরিজীবী