গাজালা মাহমুদ: কয়েকটি প্রেমের কবিতা
১.
ফিরিয়ে দাও
সাতাশ বছর পার করেছি ভীষণ একা একা
বাড়ির কাছেই ছিলে তবু দাওনি তুমি দেখা!
তেরো বছর তাকিয়ে আছি তবু বলছ মিছে
ফিরিয়ে দাও বনমালী যা গিয়েছে পিছে।
ফিরিয়ে দাও দিনরাত্রির অপেক্ষা আর শোক
লোকে বলে তুমি নাকি দারুণ ভালো লোক!
এবার নাহয় দুচোখ তুলে মায়ার চোখে তাকাও
পাঠিয়ে দিলাম অল্প আকাশ, একমুঠো রং মাখাও।
বুঝি তোমার ব্যস্ততারা আমার সঙ্গ চায় না
তাই বলে তো হুট করে মন বদলে ফেলা যায় না।
একতরফা প্রণয় দেখো আঘাত পেতে পেতে
আধমরা আজ এই কুয়াশার হাড়কাঁপানো শীতে।
বনমালী—খুন করে দাও নাহয় ধরো হাত
বাঁচিয়ে দাও স্পর্শ করে অল্প কিছু রাত।
২.
দহন
বলছি, তুমি ডুব দিয়ো না দুঃখ যে খুব গহন
নিয়ম করে পোড়াতে হয় রোদ্দুরে এই দহন।
নিয়ম করেই ঘুম আসে না দুই নয়নের পাতে
তা-ও যদি চাও ভাগ বসাতে এসো আজ রাতে।
আসবে যখন দেখতে পাবে পুরোনো এক বাড়ি
চতুষ্পাশে গাছের মতো বিষাদ সারি সারি।
নাম জানি না কিসের যেন নীলচে একটু আলো
ভালোবেসে সরাতে চায় ঘুটঘুটে এই কালো।
বলছি তুমি ভয় পেয়ো না সাহস রেখো মনে
আসার পথে আটকে দেবে সবাই ক্ষণে ক্ষণে।
আমি হলাম বহুদিনের স্থির থাকা এক নদী
প্রবল বেগে বয়ে যাব হাতটা বাড়াও যদি।
এসো প্রেমিক, আলিঙ্গনে বুকের কাছে এসো
অবাক হয়ে দেখবে সবাই এতই ভালোবেসে...।
৩.
সমান্তরাল প্রেম
তুমি আমি সমান্তরাল রেললাইনের মতো
পাশাপাশি যাচ্ছি বয়ে মিল হবে না জেনে।
অপেক্ষাতে শেষ হয়ে যায় বছর শত শত,
স্বপ্নগুলো উঠিয়ে দিলাম নাম না-জানা ট্রেনে।
বুকের ওপর ট্রেন চলে যায় নেই অভিযোগ কভু,
পৌঁছে দিচ্ছি সব লোকেদের আপন ঠিকানাতে।
রাস্তা হয়ে বিছিয়ে আছি এক হব না তবু,
আজন্মকাল ভালোবেসে থাকছি সাথে সাথে...।
৪.
নিশিকাব্য
কোথাও একটু হারিয়ে যেতে চাই
তুমি কেবল সাহস দিলেই হয়।
বড্ডরকম একঘেয়েমি জীবন
নিয়ম করে দুই বেলাতেই প্রচুর অপচয়।
লোকের কথায় কান দিয়ো না মোটে,
লোকে চায় না আমরা ভালো থাকি।
ওরা বাঁচে কোনো রকম শুধু,
ওরা চায় না আমরা দুজন জোছনা গায়ে মাখি।
আমরা চলো বেরিয়ে পড়ি এবার
জীবন কিন্তু ফুরিয়ে যাবে ঠিক।
অন্যরা যাক যেদিক খুশি ওসব ভাবনা ছাড়ো,
আমায় একটু দেখিয়ে দাও দিক।
ওই যে দেখো চাঁদ ডুবেছে মেঘে
কেউ জানে না খুব গোপনে ওরাও করছে প্রেম
নিশির নেশা প্রেমিক করুক তোমায়
হাত পেতে নাও আমার থেকে আমার গায়ের হেম।
৫.
টহল
হয় একেবারে চলে এসো,
নয় একেবারে চলে যাও।
কিছুদিন পরপর তোমার ফিরে এসে চলে যাওয়াটা ঠিক এমন—
যেন প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ঘায়ের ওপর
আবারও পেরেক গাঁথা হলো...
আমি মরুভূমি নই,
বেদুইন হয়ে টহল দিয়ো না...