মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশার সংস্কার চাই

ছবি: সংগৃহীত

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাধারণত মানবদেহের রোগনির্ণয়ে কাজ করে থাকেন। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত এসব কর্মী প্যাথলজি, রেডিওলজি, ফিজিও থেরাপি, দন্ত ও ক্যানসার বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁদের ক্যাথল্যাব, অস্ত্রোপচার কক্ষসহ কাজ করতে হয় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ–চিকিৎসকদের সঙ্গেও। এ ছাড়া ফার্মেসি বিভাগে কাজ করেন ওষুধ–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। ওষুধ তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ও বণ্টনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা। মোটের ওপর রোগনির্ণয়, নিরাময় ও চিকিৎসাসেবার অনেক ধাপেই দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে কাজ করবেন তিনজন নার্স ও চারজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় চিকিৎসক ও নার্সের আনুপাতিক হার কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ কারণে রোগনির্ণয়ের মতো জরুরি পরিষেবা বাধাগ্রস্ত হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের মতো উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ সহজ নয় এই পেশাজীবীদের। ইনস্টিটিউট থেকে বিষয়ভিত্তিক কোর্স শেষে অন্যান্য সমমানের ডিপ্লোমায় সরকারি চাকরিতে ১০ম গ্রেডে যোগদানের সুযোগ থাকলেও টেকনোলজিস্টদের যোগদান হয় ১১তম গ্রেডে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাসের সনদে এ পেশায় সরকারি চাকরির কোনো পদ এখন পর্যন্ত সৃজিত হয়নি। সরকারি নিয়োগ হয় খুবই সীমিত। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে সরকারি হাসপাতালে বাক্সবন্দী হয়ে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই পাওয়া যায়। নিয়োগ জটিলতা থাকায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি রোগনির্ণয়কেন্দ্র ও উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতে হয় অধিকাংশ টেকনোলজিস্টদের। বেতন ও কর্মঘণ্টা নিয়ে সেখানে তাঁদের প্রতিনিয়ত নানান বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বেসরকারি পর্যায়ে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ না দিয়ে অপেশাদার, অদক্ষ জনবল দিয়ে রোগনির্ণয়ের কাজ করায়। এতে রিপোর্ট ভুল হয় ফলে পত্রপত্রিকায় ‘ভুল’ চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর এখন অহরহ।

চিকিৎসাসেবা হলো একটি দলগত কাজ। এই কাজে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীর মতো মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ চিকিৎসক এবং নার্সিং পেশা সম্পর্কে যতটুকু জানেন পর্দার আড়ালে রোগনির্ণয়ে নিয়োজিত এই কর্মীদের ব্যাপারে হয়তো ততটা জানেন না কিংবা গুরুত্ব দেন না। ভালো চিকিৎসক, নার্সিং পরিষেবা এবং ওষুধ যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই সঠিক মান বজায় রেখে রোগ নির্ণয় করাও জরুরি। উন্নত চিকিৎসা গ্রহণে মানুষ যেমন খোঁজখবর নিয়ে ভালো চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নিতে আগ্রহী, ঠিক সেভাবেই রোগ নির্ণয় কে করছেন, তিনি দক্ষ কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া উচিত। বিষয়টিতে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

এ কাজে নিয়োজিত পেশাজীবীদের দক্ষতা ও পর্যাপ্ততা থাকা অপরিহার্য। উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে ও নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশার উন্নয়ন করা জরুরি। এ পেশাজীবীদের সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিত। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আরও দক্ষ করে তোলা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশা সংস্কার ও পর্যাপ্ত নিয়োগ নিশ্চিত করলে সরকারি হাসপাতালে সব রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। বহির্বিশ্বে দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্টের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশাজীবীদের দক্ষ করে তুলতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করারও সুযোগ রয়েছে আমাদের।

*লেখক: নুরুল্লাহ কামিল, শিক্ষার্থী, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী