প্রধানমন্ত্রীর যশোর আগমন উপলক্ষে আমাদের কিছু প্রত্যাশা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

যশোর অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা। বৃহত্তর যশোরে দুজন বীরশ্রেষ্ঠের জন্মস্থান। এ ছাড়া ফুলের রাজধানী, খেজুরের গুড়, নকশি কাঁথা যশোরের নাম দেশ–বিদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সংস্কৃতিচর্চা, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যশোর আপন মহিমায় উজ্জ্বল। কিন্তু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকটা পিছিয়ে ছিল যশোর। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কৃতিচর্চা বিকাশ ও শিল্পকারখানায় এখনো পিছিয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদটি। কারণ, এখানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ বেশ নবীন, নেই আধুনিক সংস্কৃতিকেন্দ্র ও ভারী শিল্পকারখানা, যা এমনটাই ইঙ্গিত দেয়! তবে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখানে দুটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ চালু করে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যশোরে আসছেন। বৃহত্তর যশোরের সন্তান হিসেবে কিছু প্রত্যাশা রইল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

যশোর একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলের নাম। পদ্মা সেতু রাজধানী শহরের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। রেল যোগাযোগ চালু হলে অতি সহজে যশোর অঞ্চলের মানুষ ঢাকা শহরে যেতে পারবে। এখানে রয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর। ভারতের সঙ্গে স্থলপথে সব থেকে বেশি পণ্য আমদানি–রপ্তানির হয় এখান থেকে। দুই দেশের নাগরিকেরা এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভ্রমণ, ব্যবসা ও চিকিৎসাসেবা নেয়। কিন্তু এখানকার ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। ভারতের অংশে বনগাঁ থেকে কলকাতার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট সময় পরপর ট্রেন ছাড়ে। একইভাবে বেনাপোল থেকে ঢাকা, খুলনা ও উত্তরবঙ্গের পথে স্বল্প খরচে ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইমিগ্রেশন সহজ ও দ্রুত সময়ে করার উদ্যোগ নিতে হবে।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে মূলত এখানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। শিক্ষা-গবেষণা বৃদ্ধি করতে যবিপ্রবির আয়তন বাড়াতে হবে। মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি এমএম কলেজের হোস্টেলের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এর ফলে যশোরে সংস্কৃতিচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

কৃষি ক্ষেত্রে যশোরের অবদান অপরিসীম। বৃহত্তর যশোরের দত্তনগরে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার। এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে পাঠদানের পাশাপাশি কৃষিতে নতুন নতুন গবেষণা করতে হবে, যা আমাদের কৃষি সেক্টরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। মানুষ কাজের আশায় ঢাকাতে যাচ্ছে। ফলে ঢাকা দিনে দিনে বসবাসের অনুপযোগী শহরের পরিণত হচ্ছে। যশোরের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শিল্পকারখানা তৈরি করতে হবে। এখানে ইপিজেড তৈরি সময়ের দাবি। যশোরের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে কাজের জন্য মানুষকে আর অন্য শহরে যেতে হবে না।
সংস্কৃতিচর্চা ও খেলাধুলায় যশোর যেকোনো অঞ্চল থেকে এগিয়ে আছে। সংস্কৃতিচর্চা বেগবান করতে কালচারাল সিটি তৈরি করতে হবে। খেলাধুলার বিকাশে এখানে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও জিমনেসিয়াম চালু করতে হবে।

যশোর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের মাধ্যমে দেশ–বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যশোর থেকে রাজধানী শহরে চলাচলে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ, মাগুরা ও সাতক্ষীরার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন এবং যশোর থেকে চৌগাছা, মহেশপুর ও দর্শনা হয়ে মুজিবনগরের মধ্যে রেললাইন স্থাপন দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। ফলে অল্প খরচ ও সময়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।

যশোরকে বিভাগ ও সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে হবে। এর মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বৃহত্তর ও ঐতিহ্যবাহী জেলা শহর হিসেবে দুটি দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

এ ছাড়া আন্তজেলা ও আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরণ, বিআরটিসি বাসে সংখ্যা বৃদ্ধি, বিনোদনকেন্দ্র, সায়েন্স সিটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: মো. শাহিন রেজা, সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়