হেমন্তের দিনে দেবকাঞ্চন ফুল সজ্জিত নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস
‘সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন পাথারের ওপার থেকে
আনলো ডেকে হেমন্তকে?’
প্রকৃতির আহ্বানে বছর ঘুরে আবার সোনাঝরা হেমন্তকাল। শীতের পর বসন্ত যেমন সুন্দর, শীতের আগ হেমন্তকালও তেমন মনোমুগ্ধকর।
ঋতুরঙ্গের এ দেশমাতৃকায় ষড়্ঋতুর পালাক্রমে বৈচিত্র্যময় সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রকৃতি। বৈচিত্র্যময় ফুলের সমারোহে ও সুবাসে ভিন্নরূপে সেজে ওঠে নোবিপ্রবির ক্যাম্পাসের প্রকৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলগাছগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অধিক দৃষ্টিগোচর ফুলগাছ হলো দেবকাঞ্চন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই গোলচত্বর, একাডেমিক ভবন-১, একাডেমিক ভবন-২, অডিটরিয়ামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার দুই ধারে সজ্জিত আছে দৃষ্টিনন্দন দেবকাঞ্চন ফুলের গাছ। গোলচত্বরে চারপাশের সজ্জিত সারি সারি গাছে হালকা গোলাপি বেগুনি রঙের ফুটন্ত ফুলগুলো যেন এক অদ্ভুত মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলেছে নোবিপ্রবির ক্যাম্পাস।
দেবকাঞ্চন বা রাঙাকাঞ্চন মূলত Fabaceae জাতের মাঝারি আকারের ৮-১০ মিটার উঁচু গাছ, যার আদি নিবাস চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (হিমালয়ের পাদদেশ ও আসাম)। দেবকাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia purpurea। ইংরেজি নাম Purple Bauhinia। ফলে একে অর্কিড ট্রি, হং কং অর্কিড, পার্পেল কাঞ্চন ও বলা হয়ে থাকে। পাঁচ পাপড়িবিশিষ্ট, অসমান লম্বাটে, ৫-৬ সেন্টিমিটার চওড়া ফুলটি ফুটে থাকে শীত আসার আগেই হেমন্তকালে। শীতকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ ফুল ফোটে। দেবকাঞ্চনে সাধারণত দুই রঙের ফুল ধরে। ফুলের রং হালকা গোলাপি আভাসহ সাদা এবং অন্যটি হালকা গোলাপি বেগুনি।
কুয়াশার চাদরে মোড়ানো এই হেমন্তের শিশিরভেজা দেবকাঞ্চন চোখজুড়ানো শোভা নিয়ে আসে। সন্ধ্যানামার আগে আকাশে যখন লালিমা ফুটে ওঠে, তখন ফুলগুলো আরও অসাধারণ হয়ে ওঠে। কার্তিক মাসে ডালে ডালে ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে দেবকাঞ্চনবৃক্ষ। শীতের পূর্বমুহূর্তে হেমন্তের হিম বাতাসে স্নিগ্ধ ফুলের ঘ্রাণে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। সেই সৌরভে উড়ে আসে কীটপতঙ্গ আর তাতেই হয় পরগায়ন।
ভালোবাসার এক অন্যতম নিদর্শন ফুল। প্রেমিকের প্রেম প্রকাশ, কবির কবিতা, লেখকের লেখনী সার্থকতা পেয়েছে ফুলের মধ্যেই। সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলে ফুল। তাই তো দেবকাঞ্চন ফুল চুলের খোঁপা ও কানে গুঁজে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ান ক্যাম্পাসের রমণীরা। আর ফ্রেমবন্দী করে তোলে সেই সুন্দর মুহূর্ত। আবার ক্যাম্পাসে দেখা মেলে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমীদের, যাঁরা প্রকৃতি কিংবা ফুল দৃষ্টগোচর হলেই তৎক্ষণাৎ মুঠোফোন বা ক্যামেরা বের করে ফ্রেমবন্দী করে রাখেন। তাঁদের জন্যও ক্যাম্পাসের এই দেবকাঞ্চন ফুলের সমারোহ এক অদ্ভুত ভালো লাগার বিষয়। মিষ্টি সৌরভে ভরিয়ে তুলে এই দেবকাঞ্চন ফুল।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেবকাঞ্চন ফুলের এ সমারোহ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে ভিন্ন আঙ্গিকে ফুটিয়ে তুলেছে। উপকূলের এই শিক্ষাঙ্গনের এমন মনোরম, সুন্দর ও শান্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মন ও মননকে প্রফুল্ল ও মুখর করে তুলেছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের পাশে, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকার রমনা পার্কে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ক্যাম্পাসেও এই ফুলের দেখা মেলে।