সাত কলেজ কেন অবহেলিত
শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয় প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজ। অধিভুক্তির শুরু থেকেই ছিল নানান ঝামেলা, যেগুলো আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়নি। অধিভুক্তির পর অন্যতম যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, সেগুলো হলো ফলাফল আশঙ্কাজনক খারাপ এবং ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা।
এখনো প্রতিবছর দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছেন। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো, যদি পরবর্তী সময়ে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য আবেদন করা হয়, তবু খাতা আর দেখা হয় না। শুধুই পুনরায় নম্বরগুলো যোগ করা হয়। এতে শিক্ষকেরা তাঁদের মনের ক্ষোভ মিটিয়ে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়েও কোনো জবাবদিহির সম্মুখীন হন না।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষার্থীরা নিজ যোগ্যতার বিচারেই এখানে আসতে পেরেছেন। কিন্তু যেভাবে তাঁরা ফেল করেন, সেটা কল্পনাতীত। আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য, মেধাক্রমে যাঁরা এগিয়ে থাকেন, তাঁরাই ঢাকা কলেজে ও ইডেন কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। সাম্প্রতিক সময়ে ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কাজনকভাবে ফেল করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা কলেজে ইংলিশে ৯৭ (নন–ক্রেডিট) জন পরীক্ষা দিয়ে ৭৮ জন ফেল করছেন, যেটা সবাইকে আবার ভাবিয়ে তুলেছে। ঠিক একই অবস্থা আরও কিছু কলেজের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে, যেগুলো মানতে পারছেন না ওই ডিপার্টমেন্টের পাঠদানকারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। তাঁদের একটা অভিযোগ, এভাবে শিক্ষার্থীরা গড়ে ফেল করতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একেকটা খাতা পুনরায় দেখার জন্য ঢাবি নিচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি। আবার মানোন্নয়ন দিতে গেলেও প্রথম বিষয়ের জন্য লাগে ১ হাজার ৫০০ টাকার বেশি। এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।
শিক্ষকেরা বলছেন, যদি ওএমআর থাকত, তবে এভাবে ফলাফলে সমস্যা হতো না। আর খাতা দেখার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবহেলায় যে অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তোলেন, তার সুরাহা হতো। বর্তমান সময়ে দেখা যায়, সকল পাবলিক পরীক্ষা, বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ পরীক্ষাগুলো ওএমআর পদ্ধতিতে হয়, সেখানে সাত কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা এখনো সেই মান্ধাতার আমলে চলছে। যেটা খুব দুঃখ ও হতাশাজনক। অধিভুক্তির এত বছর পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনো আধুনিক কোনো পদ্ধতি চালু হয়নি। এখনো সমস্যায় জর্জরিত সাত কলেজ। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দিন দিন ভয়াবহের দিকে ধাবিত হচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এসব ঝামেলার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম। অথচ সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে নিলে পুরো বাংলাদেশের জন্য সাত কলেজ হতে পারে অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জোরদার দাবি, ফাইনাল পরীক্ষাগুলো ওএমআর পদ্ধতির মাধ্যমে নেওয়া হোক। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার পাশাপাশি ভালো ফল এবং অতি দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। অনতিবিলম্বে সাত কলেজের সব দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি স্বল্প সময়ে সমস্যাগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে ঢাবি কর্তৃপক্ষ এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
লেখক: মো. সায়েদ আফ্রিদী, শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ