রঙিন পর্দার বন্ধু

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সকালের আলো ফুটতেই টেবিলে রাখা ট্যাবলেটটা ‘টিং’ শব্দ করে উঠল। আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি, স্ক্রিনে ভেসে আছে নতুন এক নোটিফিকেশন—‘আজ তোমার কল্পনার জগতে ভ্রমণের দিন।’

হ্যাঁ, আমি যে ট্যাবলেটটা ব্যবহার করি, সেটি সাধারণ ট্যাবলেট নয়। এটি একেবারে অন্য রকম। এটা শুধু পড়ার বা গেম খেলার জন্য নয়। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য সফটওয়্যার—‘ইমাজিনারি ওয়ার্ল্ড’। এখানে আমি নিজে নিজেই গল্প বানাতে পারি, চরিত্র তৈরি করতে পারি, এমনকি নিজেই সেই গল্পের একজন অংশ হয়ে যেতে পারি।

সকালের নোটিফিকেশন আমাকে খুব রোমাঞ্চিত করল। সফটওয়্যারটা বলল, ‘তুমি আজ মহাকাশ ভ্রমণে যাবে। প্রস্তুত?’ আমি উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘চলো শুরু করি!’ মুহূর্তেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক বিশাল রকেট। আর সেই রকেটের ক্যাপ্টেন? আমি নিজে!

আমার সামনে ছিল বিশাল এক গ্যালাক্সির মানচিত্র। প্রথমেই আমাদের যেতে হবে চাঁদে, সেখান থেকে মঙ্গল, তারপর বৃহস্পতি পেরিয়ে শনি গ্রহের দিকে। চাঁদে নামতেই আমার রোবট সঙ্গী আমাকে বলল, ‘এখানে একদল মানুষের বেজ তৈরি হয়েছে। তুমি তাদের সঙ্গে দেখা করো।’ চাঁদের সেই দল আমাকে মহাকাশ ভ্রমণের নিয়ম শেখাল। রকেটের ভেতরে ফেরার পর সফটওয়্যার আমাকে জানাল, এবার আমাদের যেতে হবে মঙ্গল গ্রহে।

মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর পর একটা অদ্ভুত জিনিস ঘটল। রেডিওতে একধরনের সংকেত ভেসে আসছিল। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলাম। এক অজানা ভাষায় কিছু শব্দ শুনতে পেলাম—‘আমরা শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি।’ আমি বুঝলাম, অন্য গ্রহের প্রাণীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সংকেতের দিক ধরেই আমরা পৌঁছালাম এক অদ্ভুত সবুজ ভূখণ্ডে। সেখানে ছোট ছোট প্রাণীরা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের শরীর থেকে হালকা আলো বের হচ্ছিল। তারা আমাকে জানাল, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই মানুষের সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমরা বন্ধুত্ব করতে চাই।’

আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, মহাবিশ্বের সবাই বন্ধুত্ব আর একতা চায়। তারা এমন কিছু প্রযুক্তি আমাদের দিল, যা দিয়ে আমরা পৃথিবীকে আরও সুন্দর করতে পারি। এই সফরের শেষে যখন রকেটে ফিরলাম, স্ক্রিনে একটি বার্তা ভেসে উঠল—‘তোমার আজকের অভিযান সফল! তুমি বন্ধুত্বের পাঠ শিখেছ। আগামীকাল অন্য এক মিশন নিয়ে দেখা হবে।’

এই সফরের অভিজ্ঞতা আমাকে বদলে দিয়েছিল। প্রতিদিন আমার ট্যাবলেট আমাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ দেয়। এটি শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি আমার কল্পনার সীমানাকে বাড়িয়ে দেয়।

তাহলে ভাবো তো, ভবিষ্যতে যদি এমন প্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে, জীবন কত রঙিন হতে পারে? এটা শুধু খেলার বিষয় নয়; এটি আমাদের শেখায়, কল্পনার কোনো শেষ নেই। নতুন প্রযুক্তি শুধু আমাদের বিনোদন দেবে না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তেও সাহায্য করবে।

তাহলে তোমরাও কি এমন এক সফটওয়্যার বা ট্যাবলেট পেতে চাও, যা তোমার কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে? ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে—তোমার কি প্রস্তুতি আছে?