সম্প্রীতির সেতুবন্ধে চড়ুইভাতি
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে প্রকৃতির যখন পুড়ে আঙ্গার অবস্থা, মানুষ যখন প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই একখণ্ড কালো মেঘের সঙ্গে একপশলা বৃষ্টি যেমন সবুজ প্রকৃতিকে এনে দেয় প্রশান্তি ও নির্মলতা, ঠিক তেমনই এই প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে ঈদের দীর্ঘ এক মাসের ছুটির আগে নিজেদের মধ্যে চড়ুইভাতি যেন সম্প্রীতির সেতুবন্ধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সকালে সূর্যের শিখা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হাজির হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় শ্রীরামপুরের শাঁকোতে।
বলছিলাম আমাদের চড়ুইভাতির গল্প, যা শুরু হয়েছিল বন্ধুমহলে আলোচনার মাধ্যমে। বেশ কিছুদিন থেকে আলোচনা চলছিল নিজেদের মধ্যে একটা চড়ুইভাতি করার। কিন্তু মধ্যখান থেকে ইমিডিয়ট সিনিয়রদের সঙ্গে করার কথা থাকলেও এক দুর্ঘটনার কারণে সিদ্ধান্ত বদলে আবার নিজেরা করার সিদ্ধান্ত হয়। হুটহাট পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে বন্ধুরা যেন সিদ্ধহস্ত। যেমন কথা তেমন কাজ, সবাই লেগে পড়ল চড়ুইভাতিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও সফল করার জন্য।
আমাদের মধ্যে কয়েকজন দায়িত্ব নিল সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য। নূর-আলম টাকা তোলার দায়িত্ব নিলেও মাঝপথে হাল ছেড়ে দেয়। অনেকে বাড়ি যাবে বলে তারা চড়ুইভাতি করবে না; কিন্তু প্রাপ্তি হাল ছাড়েনি, সে শক্ত করে হাল ধরে ব্যাচের অধিকাংশের টাকা তুলে ফেলে। হাসানুজ্জামান ইমনকে দেওয়া হয় গরুর মাংস কেনার দায়িত্ব, সে তার দায়িত্ব পালন করে। আগের দিন সন্ধ্যায় নূর-আলম, শুভ, হাসানুজ্জামান ইমন, সৌরভ, লিখন, নুসরাত, সুমাইয়া, সাদিয়া মিলে আমাদের চড়ুইভাতির সব বাজার শেষ করেছিলাম। চড়ুইভাতি দিন সকালে নাহিদ, নির্জন, নূর-আলম মিলে খড়ির ব্যবস্থা করে। শুভ, হাসানুজ্জামান ইমন মিলে ডেকোরেশনের হাঁড়ি এবং প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে রওনা হয় শ্রীরামপুর শাঁকোর উদ্দেশে
সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সব মেয়ে একযোগে ভ্যানে করে ‘শ্রীরামপুর শাঁকো’র উদ্দেশে রওনা হয়। স্পটে পৌঁছানোর পর ‘সবাই মিলে করি কাজ, হারিজিতি নাহি লাজ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সবাই কাজে লেগে পড়লাম। মেয়েরা কাটাকুটির কাজ শুরু করল, ছেলেরা হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার ও পানি আনার কাজ। নাহিদ, সৌরভ, তানভীর চুলায় আগুন ধরানো ও রান্না করতে লাগল। আর অন্যরা গান গাইতে, খুনসুটি করতে ও নিজেরা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রান্না শেষ হলে সবাই মিলে বটগাছের নিচে বসে খেলায় মেতে উঠল। মেয়েদের বালিশ খেলা ও ছেলেদের বালতিতে বল নিক্ষেপ খেলার আয়োজন করা হয়। তারপর দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লিখন, ইয়ামিন, শাকিল, নাহিদ, পায়েল, সাদিয়া ও প্রাপ্তি মিলে অনেক সুন্দর নাচ পরিবেশন করে। জাকিয়া, প্রাপ্তি, আসমাউল হুসনা কবিতা আবৃত্তি করে। ইমন, নূর-আলম মিলে সুন্দর সুন্দর গান উপহার দেয়। সেই সঙ্গে খেলায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সব শেষে সম্মিলিত নাচের মাধ্যমে চড়ুইভাতির অনুষ্ঠান শেষ হয়।
‘কেন্দ্রবিন্দু ৩৩’, বন্ধুত্বের বন্ধনে অনুবদ্ধ মূহূর্তের সন্ধিক্ষণে আমরা তো আমরাই। বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে কেটে যায় যেন সোনালি দিনগুলো। সবাই নিজেদের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে দূরদূরান্ত থেকে পাড়ি দিয়ে আসে। যেখানে সবাই মিলে যেন তৈরি হয় হাজারো স্মৃতি। কিছু বছর হয়তো সবাই একসঙ্গে থেকে ছড়িয়ে পড়বে নিজ নিজ গন্তব্যে আপন ঠিকানায়, কিন্তু এসব স্মৃতি রয়ে যাবে স্মৃতির মণিকোঠায়।
*লেখক: মো. হুমায়ুন কবির, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]