প্রথম আলো আমার জীবনে আলোকিত হয়ে আছে

আমার বাবা ছোটবেলায় বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। মধ্যবিত্ত পরিবার আর পরিবারের সদস্যের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অভাবের তাড়নায় কোনোমতে সে কালের ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন। আমার আম্মা পড়েছেন ক্লাস সেভেন পর্যন্ত। এটাও অনেক ছিল তখনকার সমাজে। আর কারও কারও তো স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শেখারও সুযোগ হতো না। এভাবেই অল্প বিদ্যায় বড় হলেও আমাদের মা-বাবা চাইতেন আমরা যেন সাফল্যের সর্বোচ্চ সীমায় অতিক্রম করি। পড়ি এবং মানুষ হয়ে বাঁচি! আমার বাবার পেশা বলতে একমাত্র জেলে বা সাগরে মাছ ধরা আর কৃষি কাজ করা। এসব করে কোনোমতে অভাবের সংসারের খরচ বহন করা গেলেও দরকার হলে ঋণ বা কিস্তি নিয়ে আমাদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন এবং এখনো শেখাচ্ছেন। তিনি যেন আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে আপসহীন। প্রায় সময় বলেন—বিদ্যা অর্জনে সব সম্মান এবং মর্যাদা। টাকাপয়সা কোনো দিন মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। বিদ্যা মানুষকে একমাত্র মুক্তি ও শান্তির পথ দেখিয়েছে। এটাই যেন আমার মা-বাবার বিশ্বাস। আর সম্মানটাই তাঁদের কাছে মুখ্য বিষয়। তাঁরা যেন সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন এবং মৃত্যুবরণ করতে পারেন এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।

বাবার কষ্টের টাকায় প্রাইমারি শেষ করলাম। এরপর ভর্তি হলাম মাধ্যমিকে। তখন থেকেই আমি পত্রিকা-ম্যাগাজিন, গল্প, উপন্যাস ও কবিতার একজন ভালো পাঠক হয়ে গেলাম। আমাদের গ্রামে কোনো পত্রিকার দোকান নেই। বিকেলের দিকে হকার ভাই এসে প্রতিটি দোকানে দিয়ে যেতেন পত্রিকা। পত্রিকা পড়া আমার দারুণ শখ। পত্রিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে দোকানের চারপাশে ভিড় জমাত লোকজন। যেহেতু আমাদের গ্রামে তখন বিদ্যুৎ না থাকায় খবর দেখার জন্য টিভি ছিল না। দেশ-বিদেশের খবরাখবর রাখার জন্য পত্রিকা ছিল গ্রামের মানুষের কাছে দারুণ জনপ্রিয়, বিশেষ করে প্রথম আলো। এভাবেই দোকানে ঠেলেঠুলে আমিও পড়তাম পত্রিকা। শুক্রবারের সাময়িকী পাতাটা আমার ভীষণ ভালো লাগার। এভাবেই পড়তে পড়তে ক্লাস এইটের পর থেকে আমারও লেখালেখি শুরু হয়। ক্লাস এইটে থাকাকালে একবার আম্মা বলেছিলেন—শুধু কি পড়লেই হবে? লিখতেও জানতে হবে! তার জেদ ধরে আমিও লিখে ফেললাম একবার আমাদের জন্মভূমি নিয়ে একটা ছড়া। এটা আম্মাকে দেখানোর পর তিনি তো মহাখুশি। ভীষণ উৎসাহিত করলেন আমাকে এবং আরও নিয়মিত লেখার জন্য অনুপ্রেরণা জোগালেন। এসব লেখালেখি করি তা বাবা জানলেও চুপ থাকেন। মনে মনে খুশি হলেও কিছুই বলেন না!

এরপর আস্তে আস্তে পরিচিতি হয় কিশোর আলোর সঙ্গে। বন্ধুসভার বন্ধু হয়ে উঠি। বিভিন্ন পত্রিকায় ও বন্ধুসভার ওয়েবসাইটেও লেখা প্রকাশিত হয়।

প্রিয় প্রথম আলো! তোমাকে আমি বাসি যে ভালো। তুমি আমার জীবনে প্রতিনিয়ত আলোকিত হয়ে আছো। কারণ, তুমি সবার থেকে অনন্য। প্রাইমারি থেকেই তোমার সঙ্গে পরিচয়ের পর পাঠক হয়ে উঠি। বিশেষ করে তোমার প্রতি সপ্তাহের গোল্লাছুট, অন্য আলো, নকশা, অধুনা এবং প্রতি মাসের কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা-র প্রিয় পাঠক আমি। তোমার পাঠক হওয়ার সুবাদে বন্ধুসভার বন্ধু হতে পেরেছি। এখন তোমাকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টুকটাক লেখালেখিও করি। প্রথম আলো বন্ধুসভা আমার প্রথম লেখা ছেপেছে গত ১৯ জুন বিশ্ব বাবা দিবসে, যা আমি বাবাকে নিয়ে লিখেছিলাম ‘বাবার ঋণ কীভাবে শোধ করব’ শিরোনামে। লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আমি কী যে খুশি। প্রথম আলো তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তোমার ২৫ বছর পূর্তির এই রজতজয়ন্তীতে তোমাকে জানাই শুভেচ্ছা। সঙ্গেই থাকো সব সময়!

লেখা: আব্দুল্লাহ নাজিম আল-মামুন, সদস্য, কক্সবাজার বন্ধুসভা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।