ক্যাম্পাস ছেড়ে আপনালয়ের পানে—শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ি ফেরা’ উৎসব
রমজানের শেষে এসে ঈদের চাঁদের অপেক্ষায় আছে মুসলিমরা। ঈদ আনন্দের সুবাতাস যেন এখনই বইতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি, কেনাকাটা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেই প্রস্তুতি একটু ভিন্নই বলা চলে। এখানে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যাওয়াই যেন ঈদ আনন্দ। দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফেরাই সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। যতই রমজানের দিন ফুরিয়ে আসছে, ক্যাম্পাস যেন ততই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
‘আমায় ডেকে নিয়ে যা, হে গ্রামের বাঁশিওয়ালা,
আমার গায়ের মাটির গন্ধে গড়া সে শৈশব-কালা।’
প্রিয়জনদের ছেড়ে, আপনালয় ছেড়ে থাকার পর অবশেষে বাড়িতে ফেরার পালা। মায়ের হৃদয়ের আহ্বান আর আপন নীড়ের টান যেন সেই আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। তাই ২০ রমজানের পরই শুরু হয়ে গেছে বাড়িতে ফেরার হিড়িক। ব্যাগ গুছিয়ে বাস, ট্রেন ধরার এই যাত্রার মতো মধুময় যাত্রা যেন আর নেই।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ নানা সমস্যা, জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
মায়ের সঙ্গে ফোনকলে কথা বলার সময়, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি যাওয়ার সময় এগিয়ে দিতে গিয়ে নিজ আবাসে ফেরার জন্য যে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে, এবার সে প্রতীক্ষার পালা শেষ হওয়ার পথে। পরিবারের শূন্যতা কাটিয়ে একপশলা ভালো লাগার বৃষ্টি অনুভব করতে এবার আর অল্প কিছু পথ বাকি। ছোট্ট বেলার বন্ধুরাও যে সবাই ঈদ কাটাতে আসবে, এবার তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য আর সামান্য অপেক্ষা।
শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়িতে ফেরা মানেই এক অন্য রকম উৎসব। দীর্ঘদিন হল, ক্লাসরুমে সময় কাটানোর পর প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুভূতিটা আলাদাই। শৈশবের স্মৃতি, ছেলেবেলার বন্ধু বা গ্রামের মেঠোপথ—সবই যেন তখন ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত। বাসে বা ট্রেনে দাঁড়িয়ে কিংবা জ্যামের বিড়ম্বনা আর দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি—সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে সেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। ট্রেন বা বাসের জানালায় বসে ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখার সময়, পথের অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য মন ভরে উপভোগ করার সময় শুধু স্বপ্নেরা বাড়ি ফেরার গল্পই বুনে চলে। এই স্বপ্নময় অতি আকাঙ্ক্ষিত যাত্রায় সামান্য বিড়ম্বনাও যেন মধুর।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন,
‘শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালু চরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আসিল ঈদ!’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মায়ের কোলে ফেরার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তুলুক ঈদ আনন্দকে। শৈশবের স্মৃতিমাখা মাটির গন্ধ নিতে ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ নামক এই ঈদযাত্রা সুন্দর হোক, এই প্রত্যাশা সবার।
লেখা: আমিনা হোসাইন বুশরা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়