শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশ কীভাবে
শিক্ষকতা হচ্ছে সম্মানজনক একটি মহান পেশা এবং পৃথিবীর সব পেশার সেরা। শিক্ষকেরা হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকেরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। শিক্ষকেরা স্বমহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং দীক্ষিত করে গড়ে তোলেন দেশের যোগ্য নাগরিক। শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষকেরা হচ্ছেন এই মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর। এ সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা দ্বিতীয়টি নেই। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে পৃথিবীতে যতগুলো সম্মানজনক পেশা আছে, এসব পেশার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। একজন শিক্ষক সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। উন্নত বিশ্বে শিক্ষকতা পেশাকে শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি আদর্শ জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষকেরা হলেন তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও।
শিক্ষক ও মা-বাবার অবদান অস্বীকার করেন, এমন একজনকেও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মা-বাবা যেমন সন্তানদের ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা দিয়ে বড় করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরা তাঁদের শিক্ষার আলো দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা তো বটেই। তাঁদের শিক্ষার আলো যেমন শিক্ষার্থীদের সামনের পথ চলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাঁদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা তাঁদের অনুপ্রাাণিত করে।
তাঁদের হাত ধরেই মূলত শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের মহাসাগর পাড়ি দেয়। শিক্ষকেরা প্রদীপের মতো নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থাৎ শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্রের আদর্শের মাধ্যমে, শিক্ষকেরা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেন, তা কিন্তু নয়। তাঁরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। একজন আদর্শ শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকর্মীদের কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামী প্রজন্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
বর্তমান যুগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক পরিবেশ এমনভাবে গ্রাস করে, পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতি পুরো দেয়াল ছেয়ে পড়েছে। অভিযোগ ও অনিয়মের হিড়িক পড়েছে। এগুলোতে রয়েছে স্কুল গভর্নিং বডির সদস্য, পাশাপাশি স্কুলশিক্ষকদের নামে অভিযোগের মশাল বইছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র জোরজবরদস্তি কররছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে দেখি। আসলে হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির চাপের তোপে পড়েই সাদা মনের, মহান পেশার শিক্ষক তাঁদের কর্মকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়েন। তাই কি আমাদের তাঁদের বিরুদ্ধে হাত তুলে নেওয়া বা পদত্যাগ করাতে হবে। তাহলে আপনি যদি শিক্ষকের ওপর প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার ঝড় তোলেন, তাতে আপনার শিক্ষকের ওপর মর্যাদা থাকবে কতটুকুই। তাহলে আপনি কোনো শিক্ষায় শিক্ষিত হলেন বা শিক্ষা নিয়ে আপনি কতটুকু নৈতিকতা বোধ প্রমাণ দিলেন। অতএব নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। কারণ একদিন যদি তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি, সেই শিক্ষক আমাদের শিক্ষাগুরু এবং তাঁকে সম্মানিত রাখা আমাদের দায়িত্ব।
আমাদের দেশে আদর্শ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকতার ঘাটতি সর্বত্রই। শিক্ষার মানোন্নয়নের ঘাটতিও কম নয়। শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করার তৎপরতা লক্ষণীয়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এটি অর্জনের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষক প্রদীপের মতো নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থাৎ শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্রের আদর্শের মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিত আদর্শ শিক্ষা প্রদান। একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের পূর্বশর্ত, যা পালন করেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান। প্রতিষ্ঠানপ্রধান শুধু প্রধানই নন, তিনি একজন শিক্ষকও। প্রধান শিক্ষককে কেবল ছাত্রদেরই শেখাতে হয় না, তাঁকে শেখাতে হয় প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও একাডেমিক সুপারভিশনের এবং ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি করতে হয় আত্মিক মেলবন্ধন। তবে তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে শিক্ষকতার পেশা উত্তম পেশা হলেও এত বছর পরও বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষাঙ্গনসহ নানা জায়গায় শিক্ষকেরা আজ অপমানিত হচ্ছেন! আসলে শিক্ষকসহ গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ নামক জিনিসগুলোকে আজ সমাজে অনুপস্থিত!
সর্বোপরি আমার ধীর বিশ্বাস দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা, প্রত্যেক শিক্ষক তাঁদের সঠিক ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজেদের দায়িত্বশীল মনোবল সৃষ্টি করবেন। ছাত্রদের মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। পাশাপাশি একজন অবিভাবককে তাঁর সব বিষয় প্রতিষ্ঠানের কাছে উন্মুক্ত প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে। মূল বিষয় হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রাখতে সবার উন্মুক্ত মতামতের সুযোগ রাখতে হবে।
লেখক: ফয়েজ আহাম্মেদ (মাহিন) প্রতিষ্ঠিতা ও পরিচালক-দুর্বার পাঠশালা।