চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

পুরো বিশ্ব একটি প্রযুক্তি বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, যা পাল্টে দেবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চিরচেনা রূপ। পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি শিল্পবিপ্লব ঘটেছে। তবে তার মধ্যে এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষের জীবনযাত্রায় এতটাই পরিবর্তন আনবে, যা মানুষ কল্পনাও করেনি। সেটা হতে পারে ক্ষতিকর অথবা সম্ভাবনাময়। এ বিপ্লবে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এ বিষয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জনক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব বলেন, ‘আমরা চাই বা না চাই, আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম ও চিন্তাচেতনা আগে যেমনটা ছিল, এখন তার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি।’ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে প্রযুক্তি, ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিকস, অটোমেশনস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি।

ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের পর তথ্যপ্রযুক্তির বাধাহীন ব্যবহার ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের জীবনধারার গতিকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনিভাবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদান পদ্ধতির উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে জটিল রোগের অপারেশন সহজে করা, কৃষিক্ষেত্রে, ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকার লেনদেন, মার্কেটিং, বুকিং, পণ্য সরবরাহসহ ইত্যাদি কাজকে সহজ করে। অর্থাৎ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সব ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করবে। কেননা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব এত ব্যাপক ও বহুমাত্রিক হবে যে প্রতিটি পরিবর্তন একে অপরকে প্রভাবিত করবে।

ভৌগোলিক কিংবা অর্থনৈতিক কারণে অন্যান্য বিপ্লবের মতো বাংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া দেরিতে পৌঁছালেও বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে ইতিমধ্যে বেড়েছে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ৬৫%, কৃষিজাত শিল্পে ৪০%, আসবাবশিল্পে ৫৫%, চামড়া ও জুতাশিল্পে ৩৫% কর্মহীনতা তৈরি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন। সব নেতিবাচক প্রভাবকে উপেক্ষা করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গেলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বাংলাদেশেও ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে।
 

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে হলে দেশের সরকারকে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন দেশে হাই-টেক পার্ক তৈরি, ই-সেবা চালু করা, গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে সেবাপ্রাপ্তিতে ব্যবধান কমানো, ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে ডিজিটালাইজেশন করা, লার্নিং ও আর্নিং পদ্ধতিতে আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যে অটোমেশনের ব্যবহার বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষালাভ সহজীকরণ, শিল্পকারখানা ডিজিটাল করা, ডিজিটাল অর্থনীতি তৈরি, বাংলাদেশ ই-ডিরেক্টরি তৈরি ইত্যাদি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনগণ ও সরকার উভয়েরই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দক্ষ ও উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরির বিকল্প নেই।

  • লেখক: আল মাসুম হোসেন, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। মেইল অ্যাড্রেস [email protected]