রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের (রিইব) উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জেন্ডার জাস্টিজ থ্রো দ্য লেন্স অব ক্লাইমেট জাস্টিজ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীতিনির্ধারক, গবেষক, মাঠপর্যায়ের কর্মী ও তরুণ প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণে দিনব্যাপী এই সংলাপে জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে ‘জেন্ডার ন্যায্যতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন রিইবের চেয়ারম্যান শামসুল বারি। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশগত সংকট নয়; এটি সামাজিক ও জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যকে আরও তীব্র করে। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার আলোচনায় জেন্ডার ন্যায্যতা সমানভাবে বিবেচ্য।’
পরিচিতি পর্ব শেষে রিইবের পরিচালক সুরাইয়া বেগম তাঁর প্রেজেন্টশনের প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, ‘জলবায়ু ন্যায্যতা ও জেন্ডার ন্যায্যতা—দুটিই একই কাঠামোগত বৈষম্যের ফল। এই অসমতা দূর করা ছাড়া টেকসই সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।’
বিশেষ অতিথি অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘দরিদ্র মানুষ ভূমি হারাচ্ছে ঋণের বোঝা, বন্যা ও জলবায়ুর চাপে। জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় নব্য উপনিবেশিক মানসিকতা, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দূর করা জরুরি।’
মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন রিইবের প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দ নাভিদ আনজুম হাসান। একই সঙ্গে মাঠ থেকে আগত সাতক্ষীরার চৈতন্য দাশ, রাজশাহীর অপু রাম দাশ এবং কক্সবাজারের জাবেদ নূর শান্ত তাঁদের কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার উদাহরণ উপস্থাপন করেন। তাঁরা নিজস্বভাবে স্থানীয় পর্যায়ের জলবায়ুঝুঁকি, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং নীতি-সহায়তার সীমাবদ্ধতার বাস্তব চিত্র বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিরীন পারভিন হক। তিনি নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান। তিনি বলেন, ‘কাঠামোগত সমস্যা দূর করা আমাদের জন্য একটি জরুরি চ্যালেঞ্জ। শুধু নীতিগত পরিবর্তনেই নয়, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব। জেন্ডার ন্যায্যতা নিশ্চিত না করলে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জনেও পূর্ণতা আসবে না। তাই সব ক্ষেত্রে কাঠামোগত বৈষম্য দূর করা অপরিহার্য।’
এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক, ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিড শারমিন ইসলাম, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক কাজী মাহমুদুর রহমান, আইইউবির আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আওয়াল খান, ব্লাস্টের টিম লিড মাহাপারা আলম এবং নেটজ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমিন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা। তিনি বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা ও জেন্ডার ন্যায্যতার ক্ষেত্রে কাঠামোগত বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ে নীতি প্রয়োগ ও সহায়তা কার্যক্রমকে আরও সমন্বিত করা হলে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া তরুণ প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় নিশ্চিত করা উচিত।
আয়োজকেরা জানায়, জাতীয় পর্যায়ের এই সংলাপের সুপারিশগুলো ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জলবায়ু ন্যায্যতার আলোচনাকে আরও অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে। বিজ্ঞপ্তি
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]